Friday, November 28, 2014

আই এস ডি

- দীপ, কেমন আছিস?
- আমি ভালো আছি। তোর গলাটা এরকম শোনাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ? জ্বর লাগিয়েছিস?
- ফর দ্য এন্থ্‌ টাইম, জ্বর কেউ লাগায় না, বাধায়। আর না, আমার জ্বর হয় নি।
- তুই আই এস ডি করছিস কেন? স্কাইপ অন কর। আমি অলরেডি লগ্‌ড ইন। এত ইকো হচ্ছে কেন?
- ধুস অনেক রাত হয়ে গেছে। বাথরুমে এসে কথা বলছি। এখন কম্পিউটর খুললে মার ঘুম ভেঙ্গে যাবে। হেবি ঝাড় দেবে। আর তা ছাড়া মা উঠে গেলে বলাও যাবে না।
- তাই তো। এখানেই তো সাতটা বাজে। পাঁচ ঘণ্টার গ্যাপ, আবার ডে লাইট সেভিং, মানে রাত একটা। তুই পরে ফোন কর। কালকে।
- বাজে বকা থামাবি? তোকে একটা কথা বলার ছিল।
- কালকে বলিস।
- বলছি না মার সামনে বলা যাবে না।
- আচ্ছা বল, কি বলবি?

- দীপ, রাতুল ফোন করেছিল। সুমন ওকে ফোন করতে বলেছে। সুমন নাকি খুব অনুতপ্ত। রাতুল আমায় আরও একবার ভেবে দেখতে বলল।
- তো?
- তো কি? দীপ, তুই কিছু বল?
- দেখ, সুমনকে কোন দিন’ই আমার পছন্দ নয়। বড্ড স্বার্থপর, ভেক বদল করতে ওস্তাদ। তোর সাথে যখন সুমনের সম্পর্ক ছিল, তখন আমার তাই মনে হত। এখনও ধারণা’টা পালটায় নি। পাল্টানোর কোনো কারণ দেখি নি।
- কিন্তু পাঁচ বছর তো আমরা ছিলাম একসাথে। মা কত বারণ করেছিল। বাছুরের প্রেম, এ নাকি টিকবে না। কিন্তু টিকিয়ে রেখেছিলাম তো ...
- জোর করে টিকিয়ে রেখেছিলি। আমি বারণ করেছিলাম।
- হ্যাঁ, কান পচিয়ে দিয়েছিলি। প্রথমে তো ভাবতাম নিজের জন্য লাইন ক্লিয়ার করছিস।
- বাজে বকবি না, আমার কোনোদিন'ই তোকে ... অবশ্য লাইন বলে লাইন। শালা, কোচিং এ যাকে দেখি সেই বলে মিষ্টুকে প্রোপোজ করলাম। শালা, প্রোপোজ বানান’টা অব্দি ঠিক করে বলতে পারে না। তারপর তুই যখন সুমনের সাথে ঘোরাঘুরি করতে শুরু করলি, তখন কাকিমাকে কোনোদিন বলি নি। যতবার যেতাম তোদের বাড়ি, কাকিমা বসিয়ে সেই একি কথা। মিষ্টু কি ঠিক করছে দীপ, তুমি ওকে বারণ কর না। সবে হায়ার সেকেন্ডারি হল, এখনও তো সারাজীবন বাকি। আর আমি ডবল ডিমের অমলেট খেতে খেতে ঘন ঘন মাথা নাড়তাম।

- শয়তান, কোনোদিন অমলেট শেষ না করে তো ওঠো নি।
- ওঠা সম্ভব ছিল না, কাকিমা আমুল চিজ আর টমেটো দিয়ে বানাত। উফ্‌ফ্‌ ...

- সুমন কথা বলতে চাইছে। দীপ এখন আমি কি করবো?
- দেখ মিষ্টু, প্রেমের কোন কারণ হয় না। ভালো লাগে, তাই ভালো লাগে। কেন লাগে, অর্ধেক লোক জানে না। অর্ধেক কেন, কেউই জানে বলে আমার মনে হয় না। কারণ ... কারণ ... কোন কারণ হয় না। সবাই নিজের মনে মনে একটা কারণ বানিয়ে নেয়। ও পড়াশোনায় ভালো, অমুক’কে দেখতে ভালো, ও কেয়ারিং, ও ফুচকা খায়, সে আলুপোস্ত খায় না, তমুকে রাগাশ্রয়ী গায়, ও গীটার বাজায়। আসল কথা হচ্ছে তোমার ভালো লাগছে, তাই তুমি ভালোবাসছ, মানুষটাকে কাছে পেতে চাইছ। আমি ভুল বলেছি - প্রোপোজ বানান’টা ঠিক করে না জানলেও ভালো তো বাসাই যায়।

- দীপ তোর অসীম এবং অসহ্য জ্ঞান বন্ধ কর। এখন আমি কি করবো সেটা বলবি কি তুই।
- বলছি তো।
- বলছিস কোথায়? শুধু কথা এড়িয়ে যাচ্ছিস।
- আমি এখনও বলব সুমনের কথা ভুলে যা।

- গার্জিয়ানের মত কথা বলিস না।
- বলছি না । বন্ধুর মত বলছি। সুমনের সাথে তোর সময়টা ভালো কাটে নি। কিন্তু কিছু নিশ্চয়ি ভালো লাগার মুহূর্ত ছিল। সেগুলোকে চেরিশ কর। কিন্তু লেট্‌স মুভ অন।
- পাঁচটা বছর ভুলে যেতে পারবো রে?
- ছেড়ে দে। তোর যদি মনে হয় সুমনকে এখনও তুই ভালবাসিস, তাহলে তো কাকু-কাকিমার সাথে কথা বলতে হবে ... তুই যদি বলিস আমি’ই বলতে পারি ...
- দীপ, কি বলছিস তুই? এগারো দিন বাদে আমার বিয়ে, বেনারসি কেনা হয়ে গেছে। নেমন্তন্নের কার্ড ছাপানো ... ছাপানো ছেড়ে দে ... বিলি করা হয়ে গেছে।
- কয়েকটা লোক’কে নেমন্তন্ন করেছিস বলে তোকে বিয়ে করে ফেলতে হবে, এইটে আমি বিশ্বাস করি না। যে ছেলেটাকে বিয়ে করবি বলে ঠিক করেছিস, তাকে কেমন লাগে?

- কেয়ারিং। দেখতে ভালো না, মোটা। সুমনের মত নয়।

- ওসব ছাড়। তুই কি ওর সাথে বাকি জীবনটা থাকতে পারবি?
- ছেলেটা সিন্সিয়ার। কথা যখন বলে মনে হয় ভেতর থেকে বলছে।

- ব্যস্‌ ... রাতুল-সুমন সব ভুলে যা। সেকেন্ড চান্স দেওয়াটা যেমন খুব দরকার, একটা সময়ের পরে সুযোগ গুটিয়ে নেওয়াটা তাঁর থেকেও বেশী প্রয়োজনীয়। এবার ফোন রাখ। আই এস ডি। ও হ্যাঁ, আমি ফ্রি কন্সাল্ট্যান্সি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। প্লাস তোর থেকে একটা চিকেন বিরিয়ানি অনেক দিন পাই। আমি বিদেশে আসার পরেই ছক করে টিউশনিটা শুরু করলি যাতে খাওয়াতে না হয়।

- খাওয়া ছাড়া আর কিছু বুঝিস তুই?
- না বুঝি না, কিন্তু আমার আজকের জ্ঞানদানের পর ন্যাচারেলি চিকেন বিরিয়ানিটা ডবল মাটনে আপগ্রেডেড হয়ে গেল। এবার রাখ।
- আচ্ছা রাখছি। একটা কথা বলতো দীপ আমরা এত ভালো বন্ধু কি করে রয়ে গেলাম? স্কুলের সবাই আস্তে আস্তে আলাদা হয়ে গেল ...
- হে হে, প্রিয় বন্ধু টাইপ?


- তুই কোনোদিন আমায় প্রেমের কথা শোনাতে আসিস নি তাই।

Wednesday, November 12, 2014

এক হাজার ভি লে লো


- বয়েস কতো?
- কুড়ি।
- গুল মারবি না। এইচ আই ভি টেস্ট করানো আছে? ... টেস্ট রিপোর্ট ছাড়া করি না।
- তোর কন্ডোম আছে?
- সে তো সামনের দোকানেই কিনতে পাওয়া যাবে। টেস্ট রিপোর্টটা তো আর ডার্লিং, দোকানে কিনতে পাওয়া যায় না। নাকি সেটাও কিনে ফেলেছ?

ডলি পেছনে হাত বাড়ালো।

পিছনে কুঁজো হয়ে দাঁড়ানো কুতকুতে চোখের একটা লোক। জামা কাপড়ের অবস্থা সঙ্গীন। একটা হাত কিরকম বেঁকে শরীরের পেছন দিকে ঢুকে আছে। সারা দেহে কিরকম একটা যক্ষ্মার মত ছড়িয়ে পড়া দুর্বলতা। এরকম লোকের সাথে বেশীক্ষণ কথা চালানো মুশকিল।

কিন্তু সোমনাথ’কে বাধ্য হয়ে চালাতে হল। একে শুক্রবার, সকাল থেকে অফিসে গা ম্যাজ ম্যাজ করছে। তার ওপর লাঞ্চে ডবল মাটন বিরিয়ানিটা ঢেঁকুর তুলে তুলে রাতে আর কিছু খেতে দেবে বলে মনে হচ্ছে না। এই তো কন্ডোম কিনতে গিয়ে জেলুসিল খুঁজল। নেই।

শাল্লা …  কাজের সময় একটা কিছু যদি পাওয়া যায়। পরের দোকানটায় কটা পুদিনহরা কিনে নিল সোমনাথ।

http://jmalordy.files.wordpress.com/2011/12/f562.jpg


ডলি অনেকক্ষণ হাত বাড়িয়ে আছে।
লোকটা তাও কিছু বলছে না। লোকটার চোখে শেষ বিকেলের রোদ্দুরের ঝিলিক দিয়ে গেল। নাকি ওটা ধূর্ততা ছিল? বোধহয় আরও কিছু পয়সা বাগাবার ফিকিরে আছে।

এসব কায়দা সোমনাথের ভালোই জানা আছে, এপাড়ায় তো আর কম দিন হল না। সেই কলেজে পড়তে থার্ড ইয়ারে প্রথম আসা। সেবারে অবশ্য পুরোটা সাহসে কুলোয় নি। দরজা দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকেই বমি পেয়ে গেছিল।

কড়কড়ে ষাট টাকার গুনাগার।

বিবমিষা - সোমনাথের হঠাৎ মনে পড়ে গেল শব্দটা। আজকের দিনে অবশ্য এসব শব্দ বেশী কেউ ব্যবহার করে না। ইশকুলে সোমানাথ ছাত্র ভালো ছিল। নেহাত টুয়েল্ভের পরে আর পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করলো না, তাই।

ডলি দুহাজার টাকা চেয়েছে। আসলে ডলি নয়, ওর ওই দালাল’টাই চেয়েছে। কলেজের মেয়েরা আজকাল সরাসরি কথা বলে না। চালু হয়ে গেছে। ইন্টারনেটে কাস্টমার খোঁজে। আর যারা একটু কমদামী তারা একটা সস্তার পিম্প নিয়ে ঘোরে।

ডলি একটু কম-দামী। চোখেমুখে ভদ্র ছাপ আছে, কিন্তু সে তো নিজেকে বিক্রি করার জন্যেই। সবাই জানে নিষ্পাপ মুখের দাম বেশী। সে যিশুই হোক আর হিসুই হোক।

সোমনাথ পনেরশো বলেছে।

এক পয়সা বেশী নয়।

- শালা, পনেরশো মধ্যে পাঁচশো তো তুই মারবি, জানি না ভেবেছিস?
দালালঃ দুহাজার লাগবে।
- চল্‌ ফোট। দেব না। ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না। এই পাশের গলিতেই পেয়ে যাব। অনেকদিনের চেনা, পনেরোশ’তেই পেয়ে যাব।
- দুহাজার লাগবে।
- এই হারামি, তুই অন্য কোন কথা জানিস না? একি কথা ভাঙ্গা রেকর্ডের মত কপচাস না মাইরি। মটকা পুরো গরম হয়ে যাচ্ছে।
- দুহাজার…
- দেখবি শালা, দেব না এমন … ভর সন্ধ্যেবেলা শালা পোদ মাড়াতে এসেছে … চল্‌ ফোট …

তখন ডলি এগিয়ে এসেছিল।
- ওতেই হবে। তবে অ্যাডভান্সড লাগবে।
- উরে বাবা, জাতে মাতাল, তালে তো একদম জাকির হোসেন। তা সুইটি তোমার ইয়েটা বেশ, আমার হেব্বি পছন্দ হয়েছে। বলছি কি, এ লাইনের নিয়মটা তো মাইরি তুমিও জানো … আম্মো জানি। কেন শুধুমুধু নকড়াবাজি করছ? হাফ আগে, হাফ কাজকম্মের পরে। হিন্দি সিনেমা দেখোনা নাকি?

দালাল মুখ বাড়িয়ে বলল, দু হাজার।
- অ্যাই মোলো যা, এবার কিন্তু হাত চলে যাবে মাইরি। এটা কি পিস রে ভাই, শুধু এক কথা … এক কথা … 
ডলি দালালকে বলল, ছেড়ে দে, কিপটে মাল, পনেরশোর বেশী গলবে না।
- উরে শাল্লা, তুই তোকারি। প্রচুর রস তো রে। আমার পরে কি এই মালটার পালা নাকি মিস্‌? তা এ কত দেয়, দুহাজার, এক হাজার, নাকি একশো আট, দুবার ফ্রি?

ডলি তোর কি তাতে? আম খেতে এসেছিস আম খা, গাছের না তলার সে দিয়ে কি হবে। 
সোমনাথঃ এই তো মুখ খুলেছো সোনা। আহা দিল জুড়িয়ে গেল। দেখি দেখি, টেস্টের রিপোর্ট’টা দেখি। রাতে আবার বাড়ি ফিরতে হবে, লাস্ট বাস মিস হয়ে গেলেল হেবি কেচ্ছা। তোদের সাথে রাত কাটাতে হবে।

ডলি এখনও হাত বাড়িয়ে আছে। দালালটা শালা কুতকুত করে তাকিয়ে আছে তো আছেই।
দে বে রিপোর্টটা, আর কতক্ষণ মাড়াবি?

এদিক ওদিক তাকিয়ে ডলি নিজেই দালালটার কাঁধ থেকে ঝোলা একটা দলাপাকানো কাগজ বার করলো।
- এটা কি? কীসব ওষুধের নাম লেখা - প্রেসক্রিপশন তো।

ডলি কাগজটা ছোঁ মেরে ছিনিয়ে নিল। আরেকটা কাগজ বেরোল। আরও নোংরা।
সোমনাথ খুঁটিয়ে দেখে নিল। কলকাতার বড় নার্সিং হোমের কাগজ। হুম্‌ সব কিছু ঠিকঠাকই আছে। ছবিটাও মিলছে।
- এ তো দু মাসের পুরনো রে। লেটেস্ট কপি কই?
- চার মাসে একবার করাই। প্রতি মাসে টেস্টের পয়সা কে দেবে বে, তোর বাপ?

এটা সোমনাথ ভালোই জানত। তাও গেয়ে রাখল আর কি। যদি আবার রেট বাড়িয়ে দেয়। সব মাগীর কাছে এইচ আই ভি রিপোর্ট থাকে না। তবে ইল্লি নাকি, দুহাজার সোমনাথ কিছুতেই দেবে না।

দালালটার দিকে ঘুরে বলল, এই নে হাজার রাখ। বেশী দিয়ে দিলাম। বাকিটা কাজের পরে। আর এটা একশো। টিপস্‌ না সোনা। হেবি ঠাণ্ডা দিয়েছে, একটা রামের নিপ নিয়ে আসবি। হ্যাঁ হ্যাঁ যা পাবি। একশো টাকায় আবার ব্র্যান্ড। দেখছিস না, পনেরশো টাকায় কিরকম রাস্তার মাল জুটেছে।
শোন, বোতলের মুখ যদি খোলা থাকে, প্যান্ট হলুদ করে দেব শালা, আমায় চেন না ... (চিল্লিয়ে) ... বরফ নিয়ে আসবি শালা ... ভেতরটা ঠাণ্ডা রাখতে হবে তো, নইলে বাইরেটা গরম করবো কি করে ...
--

আহ্‌ ... হাই তুলতে তুলতে সোমনাথ বেরিয়ে এল। বেশ জমেছিল খোঁয়ারিটা। কচি মেয়ে, অনেক দিন বাদে জমিয়ে ফুর্তি হল।

মিশমিশে কালো অন্ধকারের মধ্যে দালালটাকে আর অত খারাপ লাগছে না এখন। ইন ফ্যাক্ট দালালটা ভালোই কাজ করেছে। মাঝে মাঝে অন্য লোকে এসে শালা এত হল্লা করে, এত কষ্টের নেশা পুরো চৌপাট হয়ে যায়। দালালটা অন্তত অন্য জায়গায় ডিউটি মারতে যায় নি। শালাদের পয়সার খাঁই বড্ড বেশী।

সোমনাথ বেশ দরাজ হয়ে পড়ল।

এই নে বে, আরও হাজার। পুরো দুহাজার দিলাম।  আজকে তোর লাকি ডে। অ্যাশ কর ব্যাটা, অ্যাশ কর … টলতে টলতে সোমনাথ গান ধরল, “এক হাজার ভি লে লো/ দো হাজার ভি লে লো/ ভালে ছিন লো মুঝসে মেরি জওয়ানি/ মাগর মুঝকো লটা দো হাড়কাটার সানি ... ”

লাস্ট বাস ছাড়ার আগে একবার হিসু করে নিতে হবে।
--

চল দাদা, কালকে তোর ডাক্তার দেখানোর জন্য দেড় দরকার ছিল, অনেক বেশী হয়ে গেছে। তুই কি ভাবলি? তুই দুই চাইলে ও দেবে না?! আমায় না ছুঁয়ে চলে যাবে ...
হুঁ কোন জগতে যে থাকিস ... আজকাল লোকের হাতে প্রচুর পয়সা ... সেদিন পেপারে দেখলি না সিক্সথ পে কমিশন না কি ছাই একটা বেরিয়েছে। সবার হাতে পয়সা এখন।

চ, আজকে একটু বড়লোকি করি। কে সি দাসে গিয়ে মিষ্টি খাই দুটো। ওই অল্প ভাজা চমচম'টা।
--

সোমনাথ থাকলে দেখতে পেত, এই অন্ধকার ম্রিয়মাণ নিয়নের আলোতেও দালালের চোখটা আবারো জ্বলে উঠল। শ্যাময় চামড়া দিয়ে ঘষা হীরের মত।

ফিজিক্স এটাকে বলে আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন।



জীবন’ও তাই বলে।

Sunday, November 9, 2014

মাম্মা ওয়াঞ্চস য়ু টু সিট ডাউন, নাউ: "হ্যাপি নিউ ইয়ার"

হেঁ হেঁ হেঁ, আমার ব্লগের পাঠক সংখ্যা ফের দুই’তে নেমে এসেছে। রুট কজ অ্যানালিসিস করলাম - মোদ্দা কারণ হচ্ছে চরম ইনকনসিস্টেন্সি। ট্রাভেলগের নাম করে যা খুশী লিখে যাচ্ছে ব্যাটা।
 
কিন্তু স্বামীজী বলে গেছেন, যুবসমাজকে এ ভাবে রোখা যাবে না, তাই যাচ্ছেও না।

আজকের ব্লগটা আরও হাল্কা সুতো দিয়ে ট্রাভেলের সাথে বাঁধা। ইন ফ্লাইট এন্টারটেনমেন্ট - তাতে দেখা একটি সিনেমা। সিনেমার নাম হ্যাপি নিউ ইয়ার।

কিছু কিছু থ্রিলার মুভিতে প্রথমেই দেখিয়ে দেওয়া হয় খুনি কে, এরপর বাকি সময় ধরে দেখানো হয় কিভাবে গোয়েন্দা খুনিকে পাকড়ালেন বা নাকানি চোবানি খেলেন। এটা শক্ত স্টাইল। বেশীরভাগ থ্রিলার গুলো ‘কে খুনি?’ - এই সাসপেন্সের ওপর ভর করেই টিকে থাকে, তাতে অনেক সময়ই প্রথম বার দেখার পর আর মজা থাকে না। গডফাদার দেখার সময় আপনি তো নিশ্চিত জানেন, গডফাদার কে? তাহলে বারবার দেখেন কেন? গল্পের জন্যে, তাই না। 

এই মেরেছে, দেখেছেন, গাছে না উঠতেই এক কাঁদি, বড় বড় বাতেল্লা। আসলে সচিন তেন্ডুলকরের দেশের লোক তো, যেখানে এক লাখ এক্সপার্ট স্টেডিয়ামে বসে, ঠাণ্ডা পানীয়ে চুমুক দিতে দিতে প্রতিটি ডেলিভারি পরখ করে, আর বাইশ’টা উল্লুক ঘন সবুজ মাঠ’টার মধ্যে সারাদিন রোদের মধ্যে দাপাদাপি করে যায়।

মিলিয়ে নেবেন, আমি কোন দিন থ্রিলার সিনেমা বানালে এরকমভাবেই বানাবো, প্রথমেই দেখিয়ে দেবো খুনি কে। আজকের লেখাটায় সেটারই হাত মকশো করছি।

হ্যাপি নিউ ইয়ার সেই গোত্রের একটি থ্রিলার - ওই শক্ত গোছের, যেখানে প্রথমেই দেখিয়ে দেওয়া হয় খুনি কে। আসলে খুনি একজন নয়, একাধিক। শাহরুখ খান, আমাদের এন আর আই প্রীতি, রিয়েলিটি শো, ফাঁড়া খান (এটা টাইপো নয়, আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাংলায় ভদ্রমহিলার নাম এইটেই হবে)

এন আর আই কমপ্লেক্স ব্যাপারটা খুব জটিল নয়, প্রথম বোধ হয় স্যমন্তকের অর্কূট পোস্টে এই কথাটা পড়েছিলাম। কিছু কিছু এন আর আই মানুষের মধ্যে দেখা যায়, সাহেব দেখলেই ঘাড় নুয়ে আসে, জিভের জল শুকিয়ে আসে - সে আসুক অসুবিধে নেই, কিন্তু দেশ এবং দেশের মানুষ দেখলেই তাঁদের সেই শুকনো জিভে সাড় ফিরে আসে। আর এটাতেই অসুবিধে।

কারণ দেশের মানুষকে সেই সসাড় জিভের সাড় দিতে সিনেমার শুরু থেকেই অসম্ভব বিকৃত উচ্চারণে শাহরুখ ‘ফ্যারিস’ (sic) শহরের নাম উচ্চারণ করলেন।

শহরের নাম এবং তার উচ্চারণ নিয়ে এত হল্লা করছি কেন? কারণ, আমি বড্ড প্রাদেশিক। শুধু আমি নই, প্রতিটি মানুষ যাঁরা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারেন, সে তিনি পৃথিবীর যে দেশেরই হোন না কেন, তিনিও খুব প্রাদেশিক। অতএব আমি একলা নই। এবং আমি জানি যে তাঁরা আশা করেন, তাঁদের প্রিয় শহরের নাম ঠিকভাবে লোকে উচ্চারণ করবে বা অন্তত চেষ্টা করবে।

এখানে একটা ছোট্ট গল্প বলা প্রয়োজন। আমার মাস্টার ডিগ্রীর এক ক্লাসমেট - নাম আলেইদিন মাদি (Alie El-Din Mady) - বাড়ি আলেকজান্দ্রিয়ায়। ওর সাথে আমার আলাপ জমার প্রধান কারণ হচ্ছে ফ্রেশার্সের দিন ওকে আমি অজান্তে চমকে দিয়েছিলাম।

- হাই, আমার নাম অনির্বাণ।
- আমি আলেইদিন মাদি। তোমার বাড়ি কোথায়?
- কলকাতা, ইন্ডিয়া। তোমার?
- আলেকজান্দ্রিয়া।
- মি-শ-র?! (মমি কফিনের বাইরে জাগ্রত চলন্ত মিশরীয়’কে দেখার উত্তেজনায়)
- হ্যাঁ, মানে ইজিপ্ট, কিন্তু (একটু চমকে গিয়ে) কি বললে তুমি? মিশ(র)?
- হ্যাঁ, মানে আই মেন্ট টু সে ইজিপ্ট।
- মিশ(র) কথাটা তুমি কোথায় শুনলে?
- আমার ক্লাস সিক্সের ইতিহাস বইতে।
- অনির্বাণ, আমার মাতৃভাষা আরবি। আরবিতে আমার দেশের নাম মিশ(র) - ‘র’ টা প্রায় সাইলেন্ট। আমি কোনো বিদেশীকে আমার দেশের নাম আমি যেভাবে বলি সেভাবে উচ্চারণ করতে শুনি নি। এই প্রথমবার।
- (স্বস্তির নিশ্বাস) 
- ভি এইচ ডি এলের অ্যাসাইনমেন্টের জন্য প্রোফেসর টিম ফর্ম করতে বলেছেন। ওটা কি আমরা একসাথে করতে পারি, অনির্বাণ? তোমার নামটা আমি ঠিক উচ্চারণ করলাম তো?
- (প্রায় হাত পা তুলে, এতক্ষণ কি করে টিম বানাবো বুঝতে পারছিলাম না) নিশ্চয়ই, আলেইদিন। আর আমার নাম নিয়ে ভেবো না, ওটা খুব কমন নাম, ইন্টারনেটে ঘাঁটলে কোটি কোটি বেরোবে।
- ওহো তোমার নাম তো তাহলে খুব জনপ্রিয় নাম। আমার নাম’টা তাহলে তোমার নিশ্চয়ই খুব বোরিং লাগছে। বাই দ্য ওয়ে, আমার নাম উচ্চারণ করতে তোমার অসুবিধে হলে তুমি বরং আলাদিন বলতে পারো - ইংরাজিতে লোকে ওইটেই বলে।

চমক কখনো একদিন থেকে আসে না। যদি আসে তাহলে বুঝতে হবে, ঘটনা সুবিধের নয়। বা সুবিধের দিকে এগোচ্ছে না।

নাম নিয়ে আক্কেলসেলামি দেয়ার পরেও বাংলা মিডিয়াম স্কুলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ভাণ্ডার আরেকটু ভরে উঠলো - মিশর শব্দ’টা শেখানোর জন্য।
--

ব্যাক টু হ্যাপি নিউ ইয়ার - এই সিনেমা নিয়ে প্রচুর রিভিউ, ব্যঙ্গ, উত্তেজনা নেট হাতড়ালেই পাবেন। আমার এক ফেসবুক বন্ধু লিখেছে - হ্যাপি নিউ ইয়ার দেখার পরে হার্ট প্রবলেম দেখা দিলে ইনশিউরেন্স কোম্পানি সেই মেডিক্যাল ক্লেম কভার করছে না - আত্মহত্যা জনিত সমস্যা নাকি ক্লেমের পলিসির বাইরে।

এইরকম হাজারো টীকা-টিপ্পনী আপনি লিচ্চয় দেখে ফেলেছেন।

কিন্তু আপনাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, “হ্যাপি নিউ ইয়ার সিনেমাটিকে এক কথায় প্রকাশ করো” - তাহলে আপনি কি বলবেন?

আমি বলবো ঢপ।
প্রচলিত অর্থে নয়, সূক্ষ্ম অর্থে ঢপ। কলকাতা শহরে কিছু কিছু চপের দোকানে এটা পাওয়া যায়। ঢপ হল এক প্রকারের চপ, পূর্ণ নাম 'ঢপের চপ'। আগের দিন যা যা মাল বেঁচেছে, যেমন আলুর চপ, পেঁয়াজী, বেসনের গুঁড়ো, শুকিয়ে যাওয়া ঘুগনী - এই সব আচ্ছা করে মিশিয়ে একটা মন্দ পাকিয়ে দুটো তিনকোণা পাঁউরুটির মধ্যে ঢুকিয়ে, গোটা প্যাকেজ’টা ফের বেসনে চুবিয়ে লাল লাল করে ভেজে ঢপ তৈরী হয়।

হ্যাপি নিউ ইয়ার সেরকম’ই একটি সিনেমা। একটি কয়েকশো কোটির ঢপ।

নাচ, গান, লাস্য, প্রেম, দুঃখ, ইটালিয়ান জব, মোদী - সব পেয়ে যাবেন।

এত স্পয়লার দিলাম, তাও আপনি অবশ্যই সিনেমাটা দেখুন। কারণ এ সিনেমার পরতে পরতে আছে অবাক বিস্ময়। সিনেমায় হেড চোর শাহরুখ একটা তেজোড়ি খুলে হীরে চুরি করবেন। কি বলবো মশাই, তেজোড়ি’টা এক্কেবারে আমাদের বাড়ির পঁচিশ বছরের পুরনো কেলভিনেটর ফ্রিজটার মত দেখতে। সিম্পল এন্ড ডেফিনিটলি নট স্টেট অফ দ্য আর্ট। শুধু তাই নয়, সেই তেজোড়ি’র আবার এগারো কোটি কম্বিনেশন। তিনটে হুইল - দুটো বড়ো হুইল - তাতে একশোটা করে দাগ আর একটা ছোটো হুইল তাতে দশটা দাগ - এতেই ‘এগারো কোটি কম্বিনেশন’। শুধু ফ্রিজটা পঁচিশ বছরের পুরনো নয়, পরিচালকের অঙ্কের জ্ঞানও পঁচিশ বছর আগের আমার অঙ্কের জ্ঞানের সমান।

বাই দ্য ওয়ে, হ্যাপি নিউ ইয়ারে খুনি কে সে তো জানলেন, কিন্তু খুন হল কে?

মিঃ শাহরুখ খান এবং তাঁর কিছু টিকে থাকা ফলোয়ার।
একেবারে মাস মার্ডার। যেটুকু আবেগ-ভালোবাসা-বিস্ময় বাকি ছিল, সে বাজিগরের ডার্ক রোল হোক, বা দিল সে’তে দেশদ্রোহী-কিন্তু-আবেগপ্রবণ অমর কান্ত ভার্মা হোক, ক্রমশ ফিকে হয়ে আসা, পাতলা চুলের মত হাতেগোনা ‘যুক্তিবাদী’ ফ্যানেদের গেলে ফেলল হ্যাপি নিউ ইয়ার।

তাহলে হ্যাপি নিউ ইয়ারে প্রাপ্তির ভাঁড়ার কি শূন্য? নাহ্‌, ভাগ্যিস জয়া ভাদুড়ী থুড়ি বচ্চন ছিলেন। নেহাত আমার ছেলে অভিনয় করেছে, তাই দেখতে গেছিলাম এ ছাড়া একেবারে বোগাস সিনেমা - আজকের চব্বিশঘণ্টা ব্যাপী রিয়েল টাইম মিডিয়ায় এ কথা বলতে হিম্মত লাগে।

মহানগরে ডেব্যু টা তাহলে বৃথা যায় নি, কি বলেন?

পুনশ্চঃ এইটুকু লেখার পরে মনে হল একবার সার্চ করে দেখি জয়া বচ্চন কোনো ইন্টারভিউ দিয়েছেন কিনা মহানগর নিয়ে। চমক এলো। চমকটা এবার এক দিক থেকে এবং সেটা দুঃখের। 
  
“My father was a simple writer/journalist who gave his children the freedom to do what they wanted. He wrote a few books in Bengali but unfortunately, only one of them got translated into the English language it’s called the Valley of Terror or Obhishopto Chambal. It was because of him that I signed my first film Mahanagar with Satyajit Ray. To be honest, I didn’t care for Satyajit Ray. I was 13 and did the film only because I was bribed with chocolates. I wasn’t keen on doing the film, but then my father told me that it wasn’t an opportunity that comes by everyday. That if I did it, it would be a wonderful story to tell my grandchildren some day ...

... HNY is the most nonsensical film I have seen in recent years. I said that to the film’s lead actor as well. I watched it only because Abhishek was part of it he was baffooning all the way through it.”

ব্লগে এতো কিছু না বকলেও চলতো।

Saturday, November 1, 2014

মাম্মা ওয়াঞ্চস য়ু টু সিট ডাউন, নাউ: "এম আই টি"

অনেক কিছু বলার আছে। প্রেমিকাকে নয়, আপনাকে।

মানে লেখার আছে। কিন্তু কথা ইজ কথা। এইবারের কিস্তিতে বোস্টনে ঢুকতেই হবে। আগের কিস্তিগুলো এখানে একসাথে পরপর

বোস্টনে ঢোকাটা, মানে, লিটারেলি নেমে হোটেলে ঢোকাটা তেমন ইন্টারেস্টিং হল না। বেশি কিছু না, ওভার একপেক্টেশনের দোষ। 

কোম্পানীতে যে ভদ্রলোক ভিসা সংক্রান্ত খুঁটি-নাটি চেক করেন, ভিসা ইন্টারভিউ স্মুথ করার জন্য গাদা গাদা ফ্রি টিপ্‌স দেন - তাঁর একটা লব্জ ছিল।

ইউ এস সয়েল।

দ্য মোমেন্ট ইউ টাচ ইউ এস সয়েল, ইউ হ্যাভ টু হ্যাভ প্রপার ডকুমেন্ট্‌স, হুইচ শুড্‌ আন্‌ডাউটেডলি এক্সপ্লেন ইয়োর সোল রিজ্‌ন টু টাচ্‌ ইউ এস সয়েল। টাচ্‌ ব্যাপারটা এখানে খুব প্রয়োজনীয় - ভদ্রলোক 'টাচ্‌' কথাটা উচ্চারণ করার সময় হাল্কা ঝুঁকে পড়েন, আর হাত’টা সামান্য তুলে তর্জনী সো-জা সামনে বাড়িয়ে ধরেন। একটা চাবুকের মত শব্দটা শ্রোতার কানে নেমে আসে। এই ভাবে টাচ্‌ বলতে আমি একমাত্র একজনকেই দেখেছি থুড়ি শুনেছি।

হ্যাঁ, সুচিত্রা সেন।

তো ওই ডায়লগে আরেকটি শব্দ ও ভদ্রলোক একিরকম জোর দিয়ে নাটকীয় ভাবে বলতেন, সেইটে হচ্ছে ‘সয়েল’। এটার ডেলিভারি’টা অবশ্য মরগ্যান ফ্রিম্যানের মত। গুরুগম্ভীর অথচ হাল্কা কৌতুকময়।

বোস্টনে প্নেন যখন ইউ এস সয়েল টাচ্‌ করতে চলেছে, তখন শুধু একটা দৃশ্যই মন কাড়লো - অগুনতি সুদৃশ্য বিচ হাউস। ‘টু এন্ড হাফ মেন’ এ অ্যাডভার্টাইজমেন্ট থেকে ফেরত আসার সময় যেমন দেখায় তেমন। সারি সারি দোতলা বাড়ি, সামনে সুন্দর একফালি সবুজ - সেখানে বসে লোকে রোদ পোয়াতে পোয়াতে সমুদ্রের ঢেউ গুনছে।

বিচ হাউসে ভারতীয় দেখলাম না। খুব বেশী ওপর থেকে নয়, ভালোই টের পাওয়া যাচ্ছিল।

সেদিন কোন একটা হলিউডি সিরিয়ালে শুনছিলাম - ‘দ্য ফার্স্ট জেনারেশন অফ ব্ল্যাক মিলিওনেয়ারস্‌ হ্যাভ স্টার্টেড ডায়িং’। ওয়েস্ট উইং এ বোধ হয়। সেই হিসেবে ইউ এস এর ভারতীয় মিলিওনেয়ার’রা বোধহয় এখনো রিটায়ার করতে শুরু করে নি।

এয়ারপোর্ট থেকে বেরোনোর পরেই ট্যাক্সি নেওয়া হল। অভিজ্ঞতা দেশের মতই - ইন ফ্যাক্ট দেশের থেকে খারাপ। গাড়ির সুইচ অন্ করেই ড্রাইভার সায়েব জানালেন তিনি মিটারে যাবেন না।

ড্রাইভার সায়েব কথাটা লিখে বেজায় ফুর্তি হল - ভাষার যথাযথ ব্যবহার :)

ইন ফ্যাক্ট চুক্তি করে গেলে যা হয় (উইকিট্রাভেলের মতে) তাঁর থেকে তিনি পনেরো ডলার বেশী নেবেন।

সেই মুহূর্তে বিধাননগর পুলিশ’কে বড্ড মিস করছিলাম। থাকতো একটা প্রি-পেড পুলিশ বুথ - যেখানে টাকা দিলে রিসিটে লেখা থাকবে, গন্তব্যস্থানে পৌঁছে তবেই একটা নির্দিষ্ট অংশ ছিঁড়ে ড্রাইভার সায়েবের হাতে দেবেন। যাগ্‌গে, তখন আর ঝগড়া করার শক্তি নেই - দেহটা কোনোমতে এলিয়ে দিয়ে হাত নাড়লুম।

মোটেল সিক্সে পৌঁছতে পৌঁছতে নতুন শহরের আবেশ অনেকটাই কেটে গেল। নেক্সট্‌ উত্তেজনা এম আই টি - যেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে বিশ্বকর্মা আর ফিজিক্স পড়লেই ফাইনম্যান। ফাইনম্যানের নাম শুনেছেন তো? না শুনে থাকলে এখনই গুগল করতে বসবেন না। শুধু এটুকুই জেনে নিন - ক্যমুনিস্টদের মধ্যে যেমন চে, বিজ্ঞানীদের মধ্যে তেমন ফাইনম্যান।
আর হ্যাঁ, বিশ্বাসঘাতক'টা জলদি কিনে নিন। নারায়ণ স্যান্যাল।
ম্যানহাটন প্রোজেক্টের কর্মীদের চেতাব্‌নি

এম আই টি তে প্রচুর ডিপার্টমেন্ট - সেখানকার ছাত্র-ছাত্রী, প্রফেসরদের চোখ-ধাঁধাঁনো মনভোলানো কীর্তি সর্বত্র বিরাজমান এটা নিশ্চয়ই আর সাতকাহন করে বলার দরকার নেই। বরং এমআইটি’তে যে দুটো ব্যাপার সব চেয়ে আলাদা লাগলো তাদের কথা বলি।

বেশ বুঝলাম, ইউরোপের বাঘা বাঘা মিউজিয়াম ঘুরে একটা বেশ লুকোনো শ্লাঘা তৈরি হয়েছিল। আরে বাবা, মিউজিয়াম মানে তো পুরনো জিনিস - তিনশো, চারশো পাঁচশো, দুহাজার - আরও বেশী। তারপর সেসব প্রচুর খরচা করে, তোড়জোড় করে প্রিজার্ভ করা।

আমেরিকায় কই এসব?

তাও হত হার্ভার্ড, বোঝা যেত - মাত্র দুটো মেট্রো স্টেশন পরে, কিন্তু আসলে পাঁচশোটা বছর পরে। ইন ফ্যাক্ট এমআইটির এক লিঁয়াজো অফিসার, যিনি নিজে কিনা এমআইটির পি এইচ ডি পরিষ্কার জানালেন - আমরা হাবভাব করি যে হার্ভার্ডের সাথে কম্পিট করি, কিন্তু আসলে ওরা আমাদের অনুকম্পার চোখে দেখে।    

এমআইটি তো আড়াইশো বছরের মোটে। তার মধ্যে পুরোটা আবার সাফল্যমণ্ডিত নয়। সেকেন্ড ওয়র্ল্ড ওয়ারের সময় খ্যাতির চূড়ায় - এবং তারপর সচিনের মত স্ট্যান্ডার্ডটা প্রায় পৌনে শতাব্দী ধরে রাখা।

তাতে তো আর মিউজিয়াম হয় না রে বাবা।

ডাহা ভুল কথা - হয়।

এম আই টি মিউজিয়াম। একটা দোতলা আনইম্প্রেসিভ বাড়ি - তার আবার কিছু ঘরে ক্লাস হয়।
কিন্তু আপনি যদি বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে থাকেন, মানে সত্যি সত্যি ভালোবেসে হয়ে থাকেন, আঙ্গুলে গোমেদ আংটি না পরার কারণ বুঝে থাকেন, তাহলে আপনি এই মিউজিয়ামকে নিশ্চিত ভালোবেসে ফেলবেন।

বিজ্ঞানের ছাত্র না হলেও পারবেন, যদি লজিক্যাল থিঙ্কিং এ আপনার মতি থাকে। যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে মাইকেল এঞ্জেলোর পিয়েত্তা যতটা চিত্তাকর্ষক, মানুষের হাতে তৈরি ডাক্তার (সার্জেন) রোবটও তাঁর থেকে কিছু কম নয়।

এম আই টি মিউজিয়াম প্রথম আমাকে জানালো যে এক বছরের পুরনো কাজ না হয়েও মানুষের কোন একটা সৃষ্টি মিউজিয়ামে ঢুকে পড়তে পারে। ইন ফ্যাক্ট, ভবিষ্যতের সম্ভাবনাও  মিউজিয়ামে স্থান করে নিতে পারে।

২০১৬ তে পি এইচ ডি শেষ হবে, সেই কাজও ঢুকে পড়তে পারে। যেমন ধরুন কম্পিউটর সাউন্সের ছাত্রী ডানা। তাঁর প্রোজেক্টের নাম টি-পট।

যখন দুঃখ ঘনিয়ে আসে, পরিবেশ অসহ্য হয়ে ওঠে, কারোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না, কাউকে ডাকতে অব্দি ইচ্ছে করে না, পাছে সে ফুঁপিয়ে ওঠা কান্নাটা দেখে ফেলে, তখন যদি একটা টিপটে করে, অমানুষ রোবট আলতো করে আপনার সামনে চায়ের কাপ ভরে দিত - কেমন লাগতো? মেশিনের সাহায্যে যদি একাকীত্ব কাটানো যেত?

প্লিজ, ডানার নিজের ভাষায় প্রোজেক্ট সামারি পড়ে নিন। ইচ্ছে করলে মেয়েটি সাহিত্যেও পি এইচ ডি করতে পারতো এরকম একটা বিশ্বাস হয়তো আপনার মধ্যে জন্মাবে।

টি-পট, ডানার প্রোজেক্ট 
আপনি তো ছবি তুলতে ভালোবাসেন। ডি এস এল আর নিয়ে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে, লেন্স বদল করে, বার্স্ট মোডে ছবি তুলে, সেই কাঙ্ক্ষিত মোমেন্ট তুলে ধরায় পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব মহলে নাম ছড়িয়ে পড়েছে। অথবা নতুন স্মার্টফোন দিয়েই ছবি তুলেই সবাইকে চমকে দিচ্ছেন।

ব্যঙ্গ করছি না, আম্মো এসব করি। কিন্তু জানেন কি, ছবি তোলার কাজটা আদপে কত শক্ত ছিল? না না, দাদুর আমলে ওয়ান শটার ক্যামেরার কথা বলছি না। বলছি আরও পুরনো একটা সময়ের কথা যখন কিনা ফটোগ্রাফি কথাটাই তেমন ভাবে চালু হয় নি, ক্যামেরা তো দূরস্থান।

ফটোগ্রাফি বলত না তো কি বলতো? বলতো Daguerreotype। এইটেই এই মিউজিয়ামের সব থেকে পুরনো গল্প।

Daguerreotype ব্যাপারটা খায় না মাথায় দেয়, সেটা উইকিতে পড়ে নেবেন প্লিজ। পদ্ধতিটা এতোই খরচাবহুল ছিল যে, পরবর্তী কালে বাজারের চাপে উঠে যায়। আজ থেকে দুশো বছর পরে কোন ব্লগার ফিল্ম ফটোগ্রাফি নিয়ে লিখলে ব্যাপারটা যেমন দাঁড়াবে আর কি।

কিন্তু একটা পার্থক্য থেকে যাবে। প্রথম কোন কিছুর ব্যাপার স্যাপার’ই আলাদা। ওই যে বুক ফুলিয়ে লেখা, “only correct way to produce correct likeliness” - লক্ষ্য করুন দুবার 'কারেক্ট' - অর্থাৎ কিনা আপনি যতই সেরা শিল্পী দিয়ে পোর্ট্রেট আঁকান না কেন, আমাদের তোলা ছবির মত হুবহু মিলিয়ে দিতে পারবেন না।
এই কথাটা প্রথম Daguerreotype ওলা রাই বলতে পেরেছিল।

Daguerreotype

কুল জিনিস নেই কিছু? মানে সাই-ফাই টাইপ? আছে তো -
ব্ল্যাক ফ্যালকন।

কি? নামেই ছিটকে গেলেন তো? ব্ল্যাক ফ্যালকন হলেন গিয়ে এমন সার্জেন, শত টেনশনেও যার হাত কাঁপবে না। অনায়াস দক্ষতায় কাঁচি থেক টুইজারে অবাধ বিচরণ করতে পারেন ইনি। অখিল মাধানি '৯৮ সালে বানিয়েছেন এটা।

ব্ল্যাক ফ্যালকন
ফ্লোরের একটা অংশের নাম রিজনিং এন্ড লার্নিং। বোঝা গেল এই বিষয় নিয়ে রিসার্চ খুব বেশী বছর শুরু হয় নি, এমনকি রোবটেরও পরে। আগে তো রোবট, তাঁর পরে কিনা বুদ্ধিমান, মননশীল রোবট। এখানে অনেক তত্ত্ব কথাই বলা আছে, যার মধ্যে একটি অটোমেটিক চ্যাট করার যন্ত্র যে দুনিয়ার সব কিছু জানে, তৎসত্ত্বেও নম্র ভাবে আপনার ইমোশনাল প্রশ্নের জবাব দেয়। সিরির বড়দা আর কি।
কিন্তু এর থেকে বেশী চোখ টানলো একটা ফাঁকা বোর্ড - সামনে পেন্সিল আর কাগজ রাখা। দর্শকদের চাহিদা-কাম-কমেন্টস জানানোর জন্য।

সেখানে আরও অনেকের মতোই জিয়ান হু ওরফে আদেলা তার স্বপ্নের রোবটের দাবি জানিয়ে গেছে।

বেশী দাবি না - দুটো করে হাত, পা, একটাই মাথা - মাথাটা একটা বিশাল ডিসপ্লে। হাত পা গুলো স্প্রিং দিয়ে দেহের সাথে জোড়া। দেহ বলতে অবশ্য শুধুই পেট। পেটের মধ্যে কি কি থাকবে খুব স্পষ্ট করে লেখা - চিপ্‌স, জুস, কোক ইত্যাদি। ডান হাতে চাই পপ কর্ণ বানানোর মেশিন আর বাঁ হাতে শুধুই গরম গরম ধোঁয়া ওঠা কফি।

ব্যস, মাত্র এইটুকু। তবে অত্যাধুনিক রোবট হলেও মাথায় এক জোড়া অ্যান্টেনা থাকতে হবে - আমি জিয়ান'কে কল্পনা করছিলাম। য়র মাথাতেও কি বেশ টেনে দুটো বেণী বাঁধা আছে?

এই রকম ক্লিয়ার এবং কিলার স্পেসিফিকেশনের পরে জিয়ানের রোবট বানাতে এমআইটির জাস্ট কোন অসুবিধেই হওয়া উচিত নয়। তাও পাছে ভুল হয়ে যায়, জিয়ান খুব পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে রোবট'টা বেজিং এ পৌঁছে দিলে বড্ড ভালো হয়।




ইমেজ প্রসেসিং এর অনেকরকম অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে একটা ডেমো ছিল, যাতে একটা মুভিং সাদা কনভেয়ার বেল্টের ওপরে আপনাকে পকেট থেকে বের করে কোন একটা জিনিস রেখে দিতে হবে। স্ক্যানারে ছবি ওঠার পরে, কম্পিউটার ঘোষণা করবে দর্শক’রা ওই নির্দিষ্ট জিনিসের সাথে আর কি কি নিয়ে এই মিউজিয়ামে ঢোকেন। শুধু ঘোষণাটা স্পীকার না হয়ে সুপার-ইম্পোজ করে কনভেয়ার বেল্টের ওপরে করা হবে। এবার নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে, কনভেয়ার বেল্ট’টা সাদা কেন?

আমি যেমন জানতে পারলাম, চাবির সাথে লোকে সাধারণত সানগ্লাস আর পার্সের সাথে ছেঁড়া মেন্টোসের প্যাকেট নিয়ে আসে।

কোনটা আসল আর কোনটা সুপার ইম্পোজ বোঝা যাচ্ছে কি? (না বোঝা গেলে সহজ হিন্টঃ কায়া থাকলে তবেই না ছায়া থাকবে!)


এক হাজার শব্দ অনেকক্ষণ আগে পেরিয়ে গেছি, অতএব পি-ছে মো-ড়, বি-ই-ই-শ্রা-ম। 

তবে বিশ্রাম শুধু আমার, আপনার নয়, কিরকম লাগছে জানাবেন।