Monday, February 27, 2017

দিয়া

দিয়া জ্বলছিল।
আজ আমাদের পনেরো বছরের বিবাহবার্ষিকী।

বিয়ে, সেই কবে।
মুখোমুখি আলাপ পরিচয়, ছোট্ট কোর্টশিপ।
আমাদের বিয়ে।
পরিবারের হাসিকান্না মিলে দুজনে বিদেশ পাড়ি।

কত বড়ো ফ্ল্যাট।
এদেশে তখন ওরকম দেখাই যায় না, এখনও না।
তারপর সৌমিলী এলো।
বাবা নেই বহুদিন, মার মুখে হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়া হাসি।

ব্যস্ত জীবন।
বাবা মা আঙ্কল আন্টি চিড়িয়াখানা সুইমিং পুলে সৌমিলী। হ্যাপি বার্থ ডে।
সৌমিলী দৌড়চ্ছিল।
হঠাৎ পড়ে গেলো, খুব দুষ্টু হয়েছে। ওর মা তো জেরবার।

হয়তো কিছু নয়।
গিন্নী বলছিলে আজকাল সৌমিলীকে খুব চেষ্টা করে ছুটতে হয়। হাঁপিয়ে পড়ে।
বিদেশে বিপদ।
হাঁটতে পারছে না সৌমিলী, বসে থাকতে থাকতে শুয়ে পড়ছে।

ডাক্তার বলছে জেনেটিক।
কি মুশকিল, সবাই শুধু অসুখের নাম জিজ্ঞেস করে। নামহীন রোগের নাম কি অনামিকা?
চাকরি ছেড়ে দিলাম।
দেশে ফিরে যাচ্ছি, সাথে একটা বড়ো ফাইল, ছবি আর রিপোর্ট, রিপোর্ট আর ছবি।

দেশে ফ্ল্যাটে জায়গা কম।
আমার অবশ্য এত স্পেস আর লাগে না, একটা চার জিবি পেন ড্রাইভ, ব্যস।
পাশের ফ্ল্যাটের ছেলেটা। মহুল।
হঠাৎ আলাপ করল। আমি তখন পেন ড্রাইভে চিড়িয়াখানা সুইমিং পুল আঙ্কল আন্টি আর হ্যাপি বার্থডে।
 
আমেরিকা, জার্মানি আর ব্রিটেন।
নেটে পড়লাম - অনামিকা'কে নিয়ে গবেষণা হয়। চিঠি লিখলাম।
সৌমিলী শুয়ে থাকে।
দেহকান্ড নড়ে না, হার্টবিট সাতচল্লিশ, শুধু আমায় দেখলে চোখের পাতায় একটা হাসি।

মাছ সেদ্ধ করে চায়ের ছাঁকনি।
এর পরে  যে জলটা গড়িয়ে পড়ে সৌমিলী সেটা খায়। অনামিকা জিতে যাচ্ছে।
মহুল হঠাৎ নক করেছে।
বলছে সব কাগজ স্ক্যান করে তুলে রাখতে, বিদেশে পাঠাতে সুবিধে।

মহুল আমি আর ইমেলের ড্রাফট।
কোথায় জানি এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চের কাজ হচ্ছে। অনামিকা'কে নিয়ে।
গিন্নী ফোন করেছিল।
সৌমিলীর শরীর খারাপ, রাস্তায় মাঝপথ থেকে ফিরছি।

দেশে ফেরার সাত বছর।
সৌমিলী এখনও শুয়ে, আমার চার চাকা সব সময় ফুলট্যাঙ্ক।
কোন ফ্ল্যাটে থাকেন?
গিন্নী গ্রাউন্ড ফ্লোরে গেছিল, সিকিউরিটি জিজ্ঞেস করেছে। কোনোদিন নিচে নামে নি তো।

আবার একদিন ফোন।
গিন্নী বলছে তাড়াহুড়ো করে না আসতে।
মহুলকে ফোন করলাম।
ওকেও তাড়াহুড়ো করতে বারণ করলাম।

কেওড়াতলায় দশ নাম্বার।
এক এক জন চল্লিশ মিনিট করে, দুটো চুল্লী পাশাপাশি।
সৌমিলী চলে গেল।
সব ফর্মে কেন ভালো নাম লিখতে হয়? দিয়া এখন শুধু পেন ড্রাইভে।

আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী। পনেরো বছরের।
দিয়া জ্বলছিল।