Sunday, November 9, 2014

মাম্মা ওয়াঞ্চস য়ু টু সিট ডাউন, নাউ: "হ্যাপি নিউ ইয়ার"

হেঁ হেঁ হেঁ, আমার ব্লগের পাঠক সংখ্যা ফের দুই’তে নেমে এসেছে। রুট কজ অ্যানালিসিস করলাম - মোদ্দা কারণ হচ্ছে চরম ইনকনসিস্টেন্সি। ট্রাভেলগের নাম করে যা খুশী লিখে যাচ্ছে ব্যাটা।
 
কিন্তু স্বামীজী বলে গেছেন, যুবসমাজকে এ ভাবে রোখা যাবে না, তাই যাচ্ছেও না।

আজকের ব্লগটা আরও হাল্কা সুতো দিয়ে ট্রাভেলের সাথে বাঁধা। ইন ফ্লাইট এন্টারটেনমেন্ট - তাতে দেখা একটি সিনেমা। সিনেমার নাম হ্যাপি নিউ ইয়ার।

কিছু কিছু থ্রিলার মুভিতে প্রথমেই দেখিয়ে দেওয়া হয় খুনি কে, এরপর বাকি সময় ধরে দেখানো হয় কিভাবে গোয়েন্দা খুনিকে পাকড়ালেন বা নাকানি চোবানি খেলেন। এটা শক্ত স্টাইল। বেশীরভাগ থ্রিলার গুলো ‘কে খুনি?’ - এই সাসপেন্সের ওপর ভর করেই টিকে থাকে, তাতে অনেক সময়ই প্রথম বার দেখার পর আর মজা থাকে না। গডফাদার দেখার সময় আপনি তো নিশ্চিত জানেন, গডফাদার কে? তাহলে বারবার দেখেন কেন? গল্পের জন্যে, তাই না। 

এই মেরেছে, দেখেছেন, গাছে না উঠতেই এক কাঁদি, বড় বড় বাতেল্লা। আসলে সচিন তেন্ডুলকরের দেশের লোক তো, যেখানে এক লাখ এক্সপার্ট স্টেডিয়ামে বসে, ঠাণ্ডা পানীয়ে চুমুক দিতে দিতে প্রতিটি ডেলিভারি পরখ করে, আর বাইশ’টা উল্লুক ঘন সবুজ মাঠ’টার মধ্যে সারাদিন রোদের মধ্যে দাপাদাপি করে যায়।

মিলিয়ে নেবেন, আমি কোন দিন থ্রিলার সিনেমা বানালে এরকমভাবেই বানাবো, প্রথমেই দেখিয়ে দেবো খুনি কে। আজকের লেখাটায় সেটারই হাত মকশো করছি।

হ্যাপি নিউ ইয়ার সেই গোত্রের একটি থ্রিলার - ওই শক্ত গোছের, যেখানে প্রথমেই দেখিয়ে দেওয়া হয় খুনি কে। আসলে খুনি একজন নয়, একাধিক। শাহরুখ খান, আমাদের এন আর আই প্রীতি, রিয়েলিটি শো, ফাঁড়া খান (এটা টাইপো নয়, আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাংলায় ভদ্রমহিলার নাম এইটেই হবে)

এন আর আই কমপ্লেক্স ব্যাপারটা খুব জটিল নয়, প্রথম বোধ হয় স্যমন্তকের অর্কূট পোস্টে এই কথাটা পড়েছিলাম। কিছু কিছু এন আর আই মানুষের মধ্যে দেখা যায়, সাহেব দেখলেই ঘাড় নুয়ে আসে, জিভের জল শুকিয়ে আসে - সে আসুক অসুবিধে নেই, কিন্তু দেশ এবং দেশের মানুষ দেখলেই তাঁদের সেই শুকনো জিভে সাড় ফিরে আসে। আর এটাতেই অসুবিধে।

কারণ দেশের মানুষকে সেই সসাড় জিভের সাড় দিতে সিনেমার শুরু থেকেই অসম্ভব বিকৃত উচ্চারণে শাহরুখ ‘ফ্যারিস’ (sic) শহরের নাম উচ্চারণ করলেন।

শহরের নাম এবং তার উচ্চারণ নিয়ে এত হল্লা করছি কেন? কারণ, আমি বড্ড প্রাদেশিক। শুধু আমি নই, প্রতিটি মানুষ যাঁরা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারেন, সে তিনি পৃথিবীর যে দেশেরই হোন না কেন, তিনিও খুব প্রাদেশিক। অতএব আমি একলা নই। এবং আমি জানি যে তাঁরা আশা করেন, তাঁদের প্রিয় শহরের নাম ঠিকভাবে লোকে উচ্চারণ করবে বা অন্তত চেষ্টা করবে।

এখানে একটা ছোট্ট গল্প বলা প্রয়োজন। আমার মাস্টার ডিগ্রীর এক ক্লাসমেট - নাম আলেইদিন মাদি (Alie El-Din Mady) - বাড়ি আলেকজান্দ্রিয়ায়। ওর সাথে আমার আলাপ জমার প্রধান কারণ হচ্ছে ফ্রেশার্সের দিন ওকে আমি অজান্তে চমকে দিয়েছিলাম।

- হাই, আমার নাম অনির্বাণ।
- আমি আলেইদিন মাদি। তোমার বাড়ি কোথায়?
- কলকাতা, ইন্ডিয়া। তোমার?
- আলেকজান্দ্রিয়া।
- মি-শ-র?! (মমি কফিনের বাইরে জাগ্রত চলন্ত মিশরীয়’কে দেখার উত্তেজনায়)
- হ্যাঁ, মানে ইজিপ্ট, কিন্তু (একটু চমকে গিয়ে) কি বললে তুমি? মিশ(র)?
- হ্যাঁ, মানে আই মেন্ট টু সে ইজিপ্ট।
- মিশ(র) কথাটা তুমি কোথায় শুনলে?
- আমার ক্লাস সিক্সের ইতিহাস বইতে।
- অনির্বাণ, আমার মাতৃভাষা আরবি। আরবিতে আমার দেশের নাম মিশ(র) - ‘র’ টা প্রায় সাইলেন্ট। আমি কোনো বিদেশীকে আমার দেশের নাম আমি যেভাবে বলি সেভাবে উচ্চারণ করতে শুনি নি। এই প্রথমবার।
- (স্বস্তির নিশ্বাস) 
- ভি এইচ ডি এলের অ্যাসাইনমেন্টের জন্য প্রোফেসর টিম ফর্ম করতে বলেছেন। ওটা কি আমরা একসাথে করতে পারি, অনির্বাণ? তোমার নামটা আমি ঠিক উচ্চারণ করলাম তো?
- (প্রায় হাত পা তুলে, এতক্ষণ কি করে টিম বানাবো বুঝতে পারছিলাম না) নিশ্চয়ই, আলেইদিন। আর আমার নাম নিয়ে ভেবো না, ওটা খুব কমন নাম, ইন্টারনেটে ঘাঁটলে কোটি কোটি বেরোবে।
- ওহো তোমার নাম তো তাহলে খুব জনপ্রিয় নাম। আমার নাম’টা তাহলে তোমার নিশ্চয়ই খুব বোরিং লাগছে। বাই দ্য ওয়ে, আমার নাম উচ্চারণ করতে তোমার অসুবিধে হলে তুমি বরং আলাদিন বলতে পারো - ইংরাজিতে লোকে ওইটেই বলে।

চমক কখনো একদিন থেকে আসে না। যদি আসে তাহলে বুঝতে হবে, ঘটনা সুবিধের নয়। বা সুবিধের দিকে এগোচ্ছে না।

নাম নিয়ে আক্কেলসেলামি দেয়ার পরেও বাংলা মিডিয়াম স্কুলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ভাণ্ডার আরেকটু ভরে উঠলো - মিশর শব্দ’টা শেখানোর জন্য।
--

ব্যাক টু হ্যাপি নিউ ইয়ার - এই সিনেমা নিয়ে প্রচুর রিভিউ, ব্যঙ্গ, উত্তেজনা নেট হাতড়ালেই পাবেন। আমার এক ফেসবুক বন্ধু লিখেছে - হ্যাপি নিউ ইয়ার দেখার পরে হার্ট প্রবলেম দেখা দিলে ইনশিউরেন্স কোম্পানি সেই মেডিক্যাল ক্লেম কভার করছে না - আত্মহত্যা জনিত সমস্যা নাকি ক্লেমের পলিসির বাইরে।

এইরকম হাজারো টীকা-টিপ্পনী আপনি লিচ্চয় দেখে ফেলেছেন।

কিন্তু আপনাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, “হ্যাপি নিউ ইয়ার সিনেমাটিকে এক কথায় প্রকাশ করো” - তাহলে আপনি কি বলবেন?

আমি বলবো ঢপ।
প্রচলিত অর্থে নয়, সূক্ষ্ম অর্থে ঢপ। কলকাতা শহরে কিছু কিছু চপের দোকানে এটা পাওয়া যায়। ঢপ হল এক প্রকারের চপ, পূর্ণ নাম 'ঢপের চপ'। আগের দিন যা যা মাল বেঁচেছে, যেমন আলুর চপ, পেঁয়াজী, বেসনের গুঁড়ো, শুকিয়ে যাওয়া ঘুগনী - এই সব আচ্ছা করে মিশিয়ে একটা মন্দ পাকিয়ে দুটো তিনকোণা পাঁউরুটির মধ্যে ঢুকিয়ে, গোটা প্যাকেজ’টা ফের বেসনে চুবিয়ে লাল লাল করে ভেজে ঢপ তৈরী হয়।

হ্যাপি নিউ ইয়ার সেরকম’ই একটি সিনেমা। একটি কয়েকশো কোটির ঢপ।

নাচ, গান, লাস্য, প্রেম, দুঃখ, ইটালিয়ান জব, মোদী - সব পেয়ে যাবেন।

এত স্পয়লার দিলাম, তাও আপনি অবশ্যই সিনেমাটা দেখুন। কারণ এ সিনেমার পরতে পরতে আছে অবাক বিস্ময়। সিনেমায় হেড চোর শাহরুখ একটা তেজোড়ি খুলে হীরে চুরি করবেন। কি বলবো মশাই, তেজোড়ি’টা এক্কেবারে আমাদের বাড়ির পঁচিশ বছরের পুরনো কেলভিনেটর ফ্রিজটার মত দেখতে। সিম্পল এন্ড ডেফিনিটলি নট স্টেট অফ দ্য আর্ট। শুধু তাই নয়, সেই তেজোড়ি’র আবার এগারো কোটি কম্বিনেশন। তিনটে হুইল - দুটো বড়ো হুইল - তাতে একশোটা করে দাগ আর একটা ছোটো হুইল তাতে দশটা দাগ - এতেই ‘এগারো কোটি কম্বিনেশন’। শুধু ফ্রিজটা পঁচিশ বছরের পুরনো নয়, পরিচালকের অঙ্কের জ্ঞানও পঁচিশ বছর আগের আমার অঙ্কের জ্ঞানের সমান।

বাই দ্য ওয়ে, হ্যাপি নিউ ইয়ারে খুনি কে সে তো জানলেন, কিন্তু খুন হল কে?

মিঃ শাহরুখ খান এবং তাঁর কিছু টিকে থাকা ফলোয়ার।
একেবারে মাস মার্ডার। যেটুকু আবেগ-ভালোবাসা-বিস্ময় বাকি ছিল, সে বাজিগরের ডার্ক রোল হোক, বা দিল সে’তে দেশদ্রোহী-কিন্তু-আবেগপ্রবণ অমর কান্ত ভার্মা হোক, ক্রমশ ফিকে হয়ে আসা, পাতলা চুলের মত হাতেগোনা ‘যুক্তিবাদী’ ফ্যানেদের গেলে ফেলল হ্যাপি নিউ ইয়ার।

তাহলে হ্যাপি নিউ ইয়ারে প্রাপ্তির ভাঁড়ার কি শূন্য? নাহ্‌, ভাগ্যিস জয়া ভাদুড়ী থুড়ি বচ্চন ছিলেন। নেহাত আমার ছেলে অভিনয় করেছে, তাই দেখতে গেছিলাম এ ছাড়া একেবারে বোগাস সিনেমা - আজকের চব্বিশঘণ্টা ব্যাপী রিয়েল টাইম মিডিয়ায় এ কথা বলতে হিম্মত লাগে।

মহানগরে ডেব্যু টা তাহলে বৃথা যায় নি, কি বলেন?

পুনশ্চঃ এইটুকু লেখার পরে মনে হল একবার সার্চ করে দেখি জয়া বচ্চন কোনো ইন্টারভিউ দিয়েছেন কিনা মহানগর নিয়ে। চমক এলো। চমকটা এবার এক দিক থেকে এবং সেটা দুঃখের। 
  
“My father was a simple writer/journalist who gave his children the freedom to do what they wanted. He wrote a few books in Bengali but unfortunately, only one of them got translated into the English language it’s called the Valley of Terror or Obhishopto Chambal. It was because of him that I signed my first film Mahanagar with Satyajit Ray. To be honest, I didn’t care for Satyajit Ray. I was 13 and did the film only because I was bribed with chocolates. I wasn’t keen on doing the film, but then my father told me that it wasn’t an opportunity that comes by everyday. That if I did it, it would be a wonderful story to tell my grandchildren some day ...

... HNY is the most nonsensical film I have seen in recent years. I said that to the film’s lead actor as well. I watched it only because Abhishek was part of it he was baffooning all the way through it.”

ব্লগে এতো কিছু না বকলেও চলতো।

2 comments:

  1. Cinema ta ekhono dekhini but review ta jobbor :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. akebare jwaliye puriye diyechhe .. dabanol .. plane na hoye train hole nebe jetam ..

      Delete