Monday, October 17, 2016

প্লিজ সৃজিত

সৃজিত মুখার্জী ফের সশব্দে হাগলেন। মানে রাজকাহিনীতে'ও হেগেছিলেন, তার আগে মিশর রহস্যে'ও - ভুটভাট শব্দ হয়েছিল। কিন্তু এইবার কড়া জোলাপ খাওয়া পেট পো-ই-স্কা-র করা হাগা।

খারাপ লাগছে শব্দগুলো?
আমার কিন্তু ভাই বলার অধিকার আছে। যে ভদ্রলোক অটোগ্রাফ, বাইশে শ্রাবণ, জাতিস্মর, এবং কিছুটা হলেও চতুষ্কোণ বানিয়ে, মন ভরিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি যখন অন-স্ক্রীন চরম মাখালেন, তখন বলতে হবে বৈকি!
ষষ্ঠীর গভীর রাতে নিউ টাউনের ধু ধু ফাঁকা হল থেকে বেরিয়ে মনে হল সেকেন্ড ইয়ার ফিরে পেলাম। সিনিয়র দাদাদের পাল্লায় পড়ে রামসস্তা রাম খেয়ে রাম মাথাব্যথা। একদম দেজাভু - এক অনুভুতি।
ব্রেথ অ্যানাইলাজার পজেটিভ বেরোত না, কিন্তু মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছিল।

কিন্তু জানেন কি?
খারাপ লাগত না, যদি না শেক্সপীয়ার এর গপ্পের অ্যাডাপ্টেশন, বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয়, টানটান চিত্রনাট্য - ট্রেলারে এসবের লোভ দেখিয়ে ভুল পথে না চালাতেন। কি ট্রেলার, আর কি ছবি - মাইরি আপনি তো বাংলা সিনেমার সুদীপ্ত সেন!

ইউটিউবে অনেক ইন্টারভিউ'তে শুনলাম - সৃজিত এবং বাকিরা বললেন, এই বাজেটে এরকম ছবি নাকি ভাবা যায় না। আরে কি মুশকিল, কে বানাতে দিব্যি দিয়েছিল? বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে হলে পয়সা খরচা করে খাবেন, থোড়াই এম ডি এইচ বিরিয়ানি মশলা দিয়ে মিনিকিট সেদ্ধ করে খেয়ে নেবেন।

প্রচুর আন্ডারওয়ার্ল্ড সিনেমা দেখেছেন, তো? আমি, আপনি, সৃজিত - সবাই। কিন্তু এরকম যাত্রাবাহিনীর পোশাক আপনি কক্ষনো দেখেননি, একদম গ্যারান্টি। একটা লোক গীটার বাজাচ্ছে, কোন হাত চালানোর মাথামুণ্ডু নেই। যেন ঘুঁষি মেরে তবলা বাজানো হচ্ছে।

সৃজিত'কে অনুরোধ - অনেকবার দেখেছেন হয়তো আরেকটিবার নায়ক সিনেমাটি দেখুন। যাত্রায় যেটা চোখে লাগে না, অন্ধকার ঘেরাটোপে সিনেমার ক্যামেরা সেটাকেই হাজারগুণ বড় করে দেখায়। আপনার ভুলগুলো, চিত্রনাট্যের ফাঁকগুলো - সবকিছু।

এই সময় এবং অন্যান্য খবরের কাগজে দিনের দিনের পর দিন ইন্টারভিউ ছাপাতে (কিনতে - জানিনা আপনি বাল্ক রেট পেয়েছেন কিনা, তবে মোটামুটি পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ তো লাগে এক একটা ইন্টারভিউ-কাম-বিজ্ঞাপনের পেছনে), রাস্তা জুড়ে অগুনতি জমকালো হোর্ডিং লাগাতে, সঙ্গীত বাংলা নামক চ্যানেলটিকে একপেশে ভাবে টিভি আর ইউটিউব ছেয়ে ফেলতে তো কম সময়, পরিশ্রম আর পয়সা ব্যয় হয় নি। তার কিছুটা দিয়ে যদি চিত্রনাট্যের ফাঁক গুলো বুজতেন, পাঁচটা মেটিয়াবুরুজের মানুষের সাথে কথা বলে ভাবতেন যে তারা কি ভাষায় কথা বলে, তাহলে হয়তো মানি ওয়েল স্পেন্ট হত।
আপনার আমার দুজনের'ই। কি বুঝলেন?

অষ্টমী নবমীতে সাতাশি লাখ তুলেছেন? সত্যি? আপনার ফেসবুক শেয়ারেই জানলাম। ও হো আপনি তো আগে অর্থনীতির ছাত্র, ভালো স্ক্রিপ্ট না বানিয়েও কিভাবে হল ভরিয়ে ফেলে যে প্রযোজকের টাকা ঘরে ফেরানো যায় - এ তো আপনার বিলক্ষণ জানা!
 
সন্তু গান গেয়ে প্রেম করছে - প্লিজ আমার ছোটোবেলা'টা কেড়ে নেবেন না। আপনি ফেলুদা করলে তো তোপসে'কে আবার নিতবর হতে হবে। প্লিজ করবেন না।

মিশরে মরু ঝড় - নিউটাউনে হাইরাইজের কন্সট্রাকশন সাইটে, বালির ট্রাক আনলোড হলে ওর থেকে বেশী ধুলো ওড়ে।  আমার বড়বেলাটাও কেড়ে নেবেন না।

মেটিয়াবুরুজের ডন পরিষ্কার বাংলা ভাষায় কথা বলছেন, আচ্ছা জুলফিকর কি কমেডি ফিল্ম ছিল? আপনার এই মোচড়টা কি আমার মোটা মাথায় ঢোকে নি?

সারা সিনেমা জুড়ে চুল টেনে বসে ছিলাম - এই অব্দি বাজে হয়েছে এবার নিশ্চয়ই ভালো হবে। ফের দেজাভু। এখানেও ছোটবেলা ফিরিয়ে দিয়েছেন। সচিন ফিরে যাবার পরে নিশ্চিত হার জানার পরেও যে ভাবে বসে থাকতাম।
মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষ'কে বারবার টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।
নায়ক দেখার পাশাপাশি রাখাল ছেলে গল্পটাও আরেকবার পড়ে নেবেন।

আর মনে রাখবেন, সত্যজিতের সাথে তিরিশ ফুট বাই তিরিশ ফুট ছবি ছাপা হলেই একজন সত্যজিৎ হয়ে যাওয়া যায় না। সত্যজিৎ বা হিচকক ব্যাপারটা না হব বললেই হওয়া যায় না, অনেকদিন ধরে মানুষ বললে তখন হয়।

স্তাবকদের ভুলে গিয়ে একটা বেশ নির্মেদ ছবি বানান না, সেই অটোগ্রাফের মত। যেটা দেখে ভাবা যায়, নির্মল আনন্দ পাওয়া যায়।

সেই যেরকম ছবি যেটা দশ বছর বাদেও আবার দেখব, দেখার ইচ্ছে হবে।

2 comments:

  1. সময় নষ্ট করা খারাপ | কিন্তু অযথা লোভ দেখিয়ে লোকজনের সময় নষ্ট করা আরো খারাপ ! এটা ওনার বোঝা উচিত ছিল | বৃষ্টি কম, খালি বিদ্যুতবাজি !
    অনেকদিন পরে লিখলেন |

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রচন্ড গিমিক।

      সত্যি, অনেকদিন বাদে।

      Delete