Wednesday, July 24, 2013

অসময়



অ্যারিস্টটল মিশ্র, ওরফে অ্যামি আজ খুব এক্সাইটেড। নিজে স্টেজ পারফর্মার। জীবনমুখী গান গায়। সেদিন যাদবপুরে গাইতে গিয়ে হঠাৎ জয়ন্ত বোসের সাথে দেখা। সেই স্কুলবেলার ক্লাসমেট। স্কটিশ চার্চ স্কুল, তারপরে জেভিয়ার্স কলেজ।

জয়ন্ত বোস, অন্য পথের মানুষ। ফিজিক্সে পি. এইচ. ডি.। রিসার্চার, ডাক নাম জয়। ছোটোবেলা থেকে জুল ভার্ন গুলে খাওয়া, হাতে কলমে বিজ্ঞানের কারিকুরি চেষ্টা করতে গিয়ে মায়ের শাড়ি থেকে দাদুর নস্যি সব ধরে টানাটানি। শেষমেশ মা'র বিয়ের গয়না নিয়ে রিভার্স-অ্যালকেমি করতে গিয়ে, গয়না গলিয়ে ফেলে, বাবার হাতে তেল-চুকচুকে বাঁশের লাঠির পিটুনি। আশার কথা, তাতে উৎসাহ কমে নি। অতঃপর ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও ডক্টরেট।
ছোটবেলায় ওদের স্বপ্ন ছিল একটাই - টাইম মেশিন আর প্ল্যানচেট।

http://tinyurl.com/phw35eg
 
গানের প্রোগ্রাম শেষ করে জয়ের ফ্ল্যাটে দু'জনে একটু হুইস্কি নিয়ে বসলো। কথায় কথায় রাত গভীর। জীবনমুখী গানের স্বপ্নে, টাইম মেশিনের দোলা লাগতে বেশী সময় লাগে না। জয়'ই কথা পাড়ল। তার স্টাডি রুমে একটা পি. ও. সি. রয়েছে। টাইম মেশিনের বেসিক প্রুফ অফ কনসেপ্ট। কখনো চালানো হয় নি যদিও। আরেকজন দরকার। হাসাহাসি হবে বলে জয় কোনদিন ভয়ে কাউকে বলতেই পারে নি। 

অ্যামি তো এককথায় খাড়া। তার একটাই শর্ত, প্ল্যানচেট করে প্রথমেই গুরুর সাথে দেখা করতে হবে। জানতে হবে, গান রচনায়, একই সাথে কোয়ালিটি আর কোয়ান্টিটি কি ভাবে মেনটেন করা যায়। সিক্রেটটা কি? গুরু মানে অফ কোর্স, কবিগুরু।

স্টাডিরুমের মধ্যে অন্ধকার একটা টেবিল, তাতে রাখা এই নতুন মেশিন। সামনের চেয়ারটায় বসে জয় ব্যারোমেট্রিক প্রেসার, অ্যামবিয়েন্ট টেম্পারেচার সব মেপে নিয়ে সুইচটা অন করে দিল। সোঁ সোঁ করে আওয়াজ। চারদিক হঠাৎ অন্ধকার, কীরকম একটা ধোঁয়া ধোঁয়া ভাব চারিদিকে। পোড়া পোড়া গন্ধ। টাইম মেশিন শর্ট সার্কিট হয়ে জ্বলে গেল মনে হয়। 

অ্যামি অন্ধকারে আশপাশ হাতড়াচ্ছিল, হঠাৎ স্টাডির পাশের প্যাসেজে টুপ করে একটা মোমবাতি জ্বলে উঠলো। অন্ধকারে চোখ সইয়ে নিয়ে দেখে, চশমা পরা, ক্লিন-শেভ্‌ড, না না গোঁফ আছে, কোঁকড়ানো চুল এক ভদ্রলোক। বেশ অমায়িক কিন্তু কনফিডেন্ট একটা মিটিমিটি হাসি নিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। অ্যামির চেনা চেনা লাগলো কিন্তু ঠিক চিনতে পারলো না। জয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সে বিভোর হয়ে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করছে, "স্যার, স্যার ..."
- "অ্যাই জয়ন্ত, স্যার মানে? স্কটিশের, না জেভিয়ার্সের?"
- "দুর্‌ গাধা, জে সি বোস। স্যার জে সি বোস।"

টাইম মেশন কাজ করেছে তাহলে। পোড়া গন্ধটা তাহলে... কেন? যাগগে... 

ক্রমশ ঘরের পাশের প্যাসেজের দৃশ্য আরো পরিষ্কার হয়ে আসছে। আরেকটু আলো বাড়লে দেখা গেল, মোমবাতিটা জোব্বা পরা আর একজনের হাতে, মুখ ভর্তি দাড়ি, সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে হাঁটছেন - নাঃ এনাকে চিনতে জয়ের সাহায্য দরকার নেই। একেবারেই নেই।

অ্যামির চোখে গভীর আবেশ। মন দিয়ে রবীন্দ্রনাথের ড্রেস দেখছে।
- "এইরকম একটা বাদামী জোব্বা পড়ে স্টেজে আমায় মন্দ লাগবে না, কি বলিস? টু পিস পরা মডেল, আর ওয়ান পিস পরা গায়ক।"
- "গরু, রবি ঠাকুরকে দেখে তোর আর কোনো আইডিয়া মাথায় এলো না? শুধু ড্রেস?"
- "সরি বস, আমার পি. আর. আসলে অনেকদিন ধরে আমার অন-স্টেজ ড্রেস আপগ্রেড করবে বলে নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করছিলো, তাই। চ, গিয়ে কথা বলি।"
- "দাঁড়া দাঁড়া, একটা ব্যাপার কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না। আমরা টাইম মেশিন চালিয়ে রবীন্দ্রনাথকে দেখতে পেলাম, কিন্তু পরিবেশ কোথায়? উনবিংশ শতাব্দীর অ্যামবিয়েন্স কই? আমার ঘর তো সেই যে কে সেই। আমার প্লাস্টিকের বইয়ের র‍্যাক, এল. ই. ডি. টিভি। জানলার বাইরে গ্যাসের আলো কই? সেই তো নিয়নের আলো। নিকুচি করেছে আলোর, রবিঠাকুরের আমলে তো এখানে শেয়াল চরতো। যন্ত্রটা পুরোপুরি কাজ করছে না জানিস।"

ইতিমধ্যে চরিত্রেরা মৃদু লয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। জগদীশ স্টাডিরুমে ঢুকে খক্‌ খক্‌ করে একটু কেশে নিলেন।
- "বাপরে কী ধোঁয়া, কী যন্ত্র নিয়ে কথা হচ্ছে বাবারা?"
- "মানে... ওই টাইম মেশিন... যাতে করে সময় পাড়ি দেওয়া যায়।"

রবীন্দ্রনাথ স্টাডি টেবিলের ওপরে মোমবাতিটা নামিয়ে রাখলেন। জোব্বার পেছনে হাতদু'টো মুড়ে, মাথা সামান্য নিচু করে, লম্বা ভরাট চেহারার মানুষটি হাঁটছেন। দীর্ঘ পদক্ষেপ। মাথা তুললেন, মুখে মৃদু হাসি।

- "আঃ, এই বুদ্ধি নিয়ে তোমরা বুঝি আজকাল গান আর থীসিস লেখো? পরের বছরে নোবেলটা ওরা আমাকেই দেবে কিনা, জগদীশ ওর নতুন যন্ত্রটাতে দেখাবে বলে ভারী জেদ ধরলো। ১৯১২ সালে ছিলাম আমরা। ভ্রমবশতঃ এককের সাথে শতকের বোতামটাও এক ঘর এগিয়ে দেওয়ায় এই বিপত্তি। একের পরিবর্তে একশ'এক। ১৯১৩ না হয়ে ২০১৩। বুঝলে, ছোকরা?"

- "মানে?"
- "মানে তোমরা সময়ে পেছোও নি, আমি আর জগদীশ বেশী এগিয়ে ২০১৩ এর কলকাতায় চলে এসেছি।"

- "ও হো... তার মানে স্যার জে সি বোসের আবিষ্কার? টাইম মেশিন?"
- "তাই তো দাঁড়ালো। তবে কীনা জগদীশ আবার নিজে পেটেন্ট নিতে বিশেষ আগ্রহী নয়। এককাজ কোরো তোমাদের পুড়ে যাওয়া যন্ত্রটা ওকে একটু দেখিয়ে নিও। ওটা ঠিকঠাক কাজ করলে তোমরাই পেটেন্ট ফাইল কোরো'খন। বাঙালি পেটেন্ট নিয়ে ব্যবসা করেছে জানলে প্রফুল্ল খুশি হবেন।"

- "ইয়ে, মানে... টা... টা... টাইম মেশিনের পেটেন্ট নিতে বলছেন?"
- "টাইম মেশিন টেশিন নয়, ওসব পশ্চিমী নাম। যন্ত্রের নাম দিও অসময়।"


12 comments:

  1. অনেকটা আঁতলামো, কিছুটা খ্যাপামো - অতএব অ-আ-ক-খ :)...besh besh..

    ReplyDelete
  2. বিগ বস জানাচ্ছে, চুপ কথায় প্রথম কমেন্ট করার জন্য আপনাকে একটি চকোলেট দেওয়া হবে। না সুইস নয়, ক্যাডবেরী।

    আপনাকে দেওয়া সিক্রেট টাস্কটি শেষ হয়েছে। আপনি এখন আসতে পারেনঃ)

    ReplyDelete
  3. Going good. Mr. Asim Chowdhury r pathei cholechis... aro bhalo kichu asha kori..

    ReplyDelete
  4. Ammo asha kori:) kintu Delhi onektai dur ..

    ReplyDelete
  5. Idea Good. Time machine-taa ekbaare digital input niye nile golpotaa hoto naa. Lekhani chhimchhaam.
    Kintu Duto Point:(eduto noy kintu)
    i) Rabindranath-er haate mombaati thaakaa satteo uni jobbaar pichhone du haat murechhen.
    ii) Ekoker sthaane shotoker botaam tiple 1913-er bodole 2012 hobe.

    ReplyDelete
    Replies
    1. শঙ্করদা, তোমার কমেন্টটা পেয়ে প্রচুর আনন্দ পেলাম। সবাই তো অ্যাতো খুঁটিয়ে পড়ে না।
      i) এইটা জেনুইন মিস। মোমাবাতি নামিয়ে রাখাটা অ্যাড করতে হবে।
      ii) তুমি বললে বিশ্বাস করবে না, প্রথমে ডেট গুলো তাই ছিল। কিন্তু পরে মিল দিতে গিয়ে, মনে হল যে লেখক মিল দেওয়ার জন্য 'ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি' লিখেছেন, তাঁকে নিয়ে গল্পে তো একটু গোঁজামিল দিতেই পারি। কেউ খেয়াল করবে না।
      কিন্তু পাঠক যখন খেয়াল করেছে, চেঞ্জ তো করতেই হবে। বরং, ১ টিপতে গিয়ে ১০১ টিপে দিয়েছে, এরকম করে দিই। সাপও মরবে, আর ......:)

      Delete
  6. pathok o pathikagon,
    ei lekhti ei somoy'e chhapa hoyechhe ..
    http://www.epaper.eisamay.com/Details.aspx?id=6590&boxid=16326343

    ReplyDelete