(১)
বিপিন বাবু সোদপুর থেকে ডি এন ৪৬ ধরবেন। প্রতিদিন’ই ধরেন। গত তিন-চার বছর ধরে এটাই বিপিন’বাবুর অফিস যাওয়ার রুট। হিতাচি এসি কোম্পানীর সিনিয়র টেকনিশিয়ন, বয়েস আটান্ন। এত বেশী বয়েসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে এসি সার্ভিসিং করা, ইন্সটল করা একটু চাপ।
ভুল বললাম, অনেকটাই চাপ। সাধারণত: কেউ করে না। এই বয়েসে ম্যাক্সিমাম অফিসে বসে হাল্কা ডেস্ক ওয়ার্ক। খুব বেশী কায়িক পরিশ্রমের কাজ হলে কর্পোরেট অফিসে টানা সেন্ট্রাল এসি বসানোর কাজের দেখভাল। ওসব প্রোজেক্টে অনেক জুনিয়র ছেলে কাজ করে, তাদেরকে দিয়ে ঠিকঠাক কাজ করিয়ে নিতে পারলেই কোম্পানি খুশি।
কিন্তু বিপিন’বাবুর এরকম গেরস্ত বাড়িতে দিনের পর দিন ঘুরে ঘুরে কাজ করতে ভালো লাগে। কেন লাগে সেটা বলা মুশকিল। অনেকগুলো কারণ আছে।
বিপিন বাবু’র মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলে সেদিন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে মুখস্থ করছিল – মোগল সাম্রাজ্য পতনের দশটি কারণ। আসলে মোট নাকি আঠারো’টা কারণ আছে – তার মধ্যে সেরা দশ’টা স্কুলের স্যর বেছে দিয়েছেন। ওগুলোই পরীক্ষায় লিখতে হবে। বাকি আট’টা কারণ ফালতু, ওতে নাম্বার উঠবে না। এখন নাকি পরীক্ষায় ওটাই ট্রেন্ড – ব্রিফ এন্ড টু দ্য পয়েন্ট।
এই ছিমছাম ‘ব্রিফ এন্ড টু দ্য পয়েন্ট’ ব্যাপারটা বিপিন’বাবুর বেশ মনে ধরেছে। বিপিন বাবুও মনে মনে ভাবার চেষ্টা করেন, বাড়ি বাড়ি ঘুরে এসি ফিট করার মধ্যে কি মজা আছে? গেরস্ত বাড়ি’তে যেতে ভালো লাগার অনেক কারণ আছে বটে – এই যেমন ভালো কোয়ালিটির ‘বাড়ির চা’ পাওয়া যায়। কেউ কেউ তো আবার জিজ্ঞেস করে, দাদা চিনি কতো’টা? প্লেন লিকার, না দুধ দিয়ে? কেউ বা আবার একটা অমলেট, বা দু’টো মিষ্টি। অনেকদিন আগে শক্তিগড়ে একজনের বাড়িতে এসি লাগাতে গিয়ে মেঠো ইঁদুরের মতো সাইজের ল্যাংচা খেয়েছিলেন। গৃহকত্রী জিজ্ঞেস করেছিলেন, “দাদা, আরেকটা দিই?”, অসহায় বিপিন মাথা নেড়েছিলেন।
একবার একটা ব্যাচেলর’দের মেসে এসি লাগাতে দিয়ে সে কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি ব্যাপার। সব কটা চব্বিশ-পঁচিশের চাকুরে ছেলে। মফস্বলের ছেলে, কলকাতায় মেস করে থাকে। সবাই মিলে চাঁদা করে এসি কিনেছে, এসির সাথে মাইক্রোওভেন ফ্রি ছিলো বলে চিকেন তন্দুরি কিনেছে। আর তন্দুরি আবার শুকনো গলায় খাওয়া যায় নাকি? তাই দু’বোতল ওল্ড মঙ্ক’ও এসির সাথে সাথে মেসে ঢুকে পড়েছে। তবে ছেলেগুলো সভ্য-ভদ্র। দুম করে খেতে শুরু করে দেয় নি। এসি ইন্সটল হয়ে যাওয়ার পরে একজন, খুব আস্তে জিজ্ঞেস করল, দাদা, আপনার কি ওসব চলে?
বিপিন’বাবু বিলক্ষণ সমঝদার ব্যক্তি, সামান্য ইশারাই যথেষ্ট। সুতরাং চলেছিল। বেশ ভালোই চলেছিল। ইন ফ্যাক্ট, ওই গন্ধ নিয়ে বাড়ি ফিরলে বৌ পেটাতে পারে এই ভয়ে বিপিন’বাবু সেদিন আর বাড়ি ফেরেন নি। মেসেই একটা তক্তপোষে রাত কাটিয়ে দিয়েছিলেন।
হ্যাঁ যা বলছিলাম, বিপিন’বাবু অনেক ভেবে বার করেছেন, ছুটকো ছাটকা বিষয় বাদ দিলে তাঁর এই বাড়ি বাড়ি ঘুরে এসি বসাতে ভালো লাগার কারণ আসলে ঠিক দু’টো।
প্রথম হচ্ছে ১৯৬৮ সালের মে মাসের পচা গরমে অযান্ত্রিক দেখা। অযান্ত্রিকের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে সেদিন স্পেশাল শো ছিল প্রিয়া’তে।
বিপিনের তখন বারো বছর বয়েস।
খুব একটা বেশী কিছু বোঝার বয়েস নয়। বিপিন বোঝেন’ও নি। শুধু হাঁ করে দেখেছিলেন, মানুষের সাথে যন্ত্রের প্রেম। সে প্রেমে কোনও ব্যারিটোন কন্ঠের দাপট নেই, সুরেলা কন্ঠের মায়া’ও নেই, আছে কেবল ১৯২০ সালের শেভ্রলে গাড়ির বিচ্ছিরি হর্ন আর এক মায়াবী প্রেম।
সেই থেকে বিপিন’বাবু যন্ত্রের ভক্ত, থুড়ি প্রেমিক। কিভাবে একটা যন্ত্র কাজ করে, কাজ করতে করতে কেন যন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সেটা যন্ত্র কিভাবে আওয়াজ করে জানান দেয়।
এই যেমন ভালো সার্ভিস করা মেশিন কিরকম তেল খাওয়া আওয়াজ দেয়। ঠিক যেন মাছের মাথা দিয়ে ঘন ডাল আর বাটা মাঝের পাতলা ঝোল খেয়ে, ঠাণ্ডা শান দেওয়া লাল মেঝেতে কেউ নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে।
একটা নিয়মিত মসৃণ শব্দ। সমান ব্যবধানে উঠছে, পড়ছে।
আর যে যন্ত্র আদর পায় না? অনিয়মিত, উঁচু নিচু শব্দ। ঠিক যেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেউ কাঁদছে। ঘ্যাটর ঘ্যাটর করে আওয়াজ উঠছে, নামছে। ক্যাঁচ কোঁচ, ক্যাঁচ ক্যাঁচ কোঁচ, ক্যাঁচ ক্যাঁচ কোঁচ। কোনো নিয়ম নেই। ক’টা ক্যাঁচের পরে ক’টা কোঁচ হবে কেউ জানে না। মাঝে মাঝে তীব্র বেতালা বেসুর ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ শব্দ, ঠিক যেন কান ধরে টানছে কেউ।
এ ভাবে চলতে চলতে, কথা নেই বার্তা নেই, দুম করে একটা শব্দ। হঠাৎ সব চুপ। বাচ্চা ছেলে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকলে অসহিষ্ণু বাবা-মা মেজাজ হারিয়ে চড় মেরে দিলে, গাল ফুলিয়ে চুপ হয়ে যাওয়ার মত।
মোদ্দা কথা বিপিন’বাবুর দৃঢ় বিশ্বাস, যন্ত্র’কে ভালবাসলে সেও উল্টে ভালোবাসে। যন্ত্র মানুষের কথা শোনে। ইন ফ্যাক্ট যন্ত্রের প্রাণ আছে এটা’ও বিপিন বাবু প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু সবাই সেটা টের পায় না বলে কাউকে বলেন নি।
(২)
দ্বিতীয় কারণ’টা অবশ্য ‘যান্ত্রিক’ নয়, মানবিক।
গেরস্ত বাড়িতে বেশীরভাগ সময়’ই নতুন এসি মেশিন বসায়। সব চেয়ে কমন ছবিটা হল - স্বামী-স্ত্রী চাকরি করে, পরিবারে সাম্প্রতিক আর্থিক সচ্ছলতা একটু বেড়েছে। প্লাস প্রিন্ট আর অডিও-ভিসুয়াল মিডিয়ায় দিবারাত্র বিজ্ঞাপন। ফল হচ্ছে কত টনের এসি লাগবে সে সম্পর্কে টনটনে জ্ঞান, আর মাত্র কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে একটি সুশোভিত যন্ত্র – ওপরে জ্বলজ্বল করছে পাঁচটি তারা। পাঁচতারা জীবন কে না চায়?
বিপিন’বাবুর দেখতে ভালো লাগে - নতুন দম্পতি হাঁ করে দেখছে এসি মেশিনের না-খোলা মোড়ক’টা। চোখে মুখে কি ভীষণ একটা প্রত্যাশা। বিপিনের হাত ধরে তাদের প্রতিদিনের চাওয়া-পাওয়া, অল্প-পাওয়া আর একদম’ই না-পাওয়া গুলো যেন এক লহমায় মিলিয়ে যাবে। বিপিন বাবু পকেট থেকে সেলোটেপ কাটার ছুরি’টা বার করেন, আর লুকিয়ে লুকিয়ে দু’জোড়া চোখ দেখতে থাকেন। তাঁর হাতেই রয়েছে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ।
এসি ফিট করে দেওয়ার পরে ম্যান্ডেটরি ফিল্ড টেস্টিং করতে হয়। দশ ফুট বাই দশ ফুট জুড়ে একটা ঝোড়ো ঠান্ডা হাওয়া। স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে একটা তৃপ্তির দৃষ্টি-বিনিময়। বিপিনের নিজেকে সর্বশক্তিমান মনে হয়।
অন্য রকম’ও হয়। রিটায়ার্ড বাবা-মা’র শোবার ঘরে প্রবাসী ছেলে এসি কিনে লাগাচ্ছে। বিপিন’বাবু চা খেতে খেতে ছেলের মা’র সাথে কথা বলছেন।
- “জানেন দাদা, আমার বৌমা খুব ভালো মেয়ে। ছেলে-বৌ নিজেদের ঘরে এসি লাগাবে ঠিক করেছে। আমাদেরকে বলল তোমাদের ঘরেও লাগাব। বিছানার মাথার কাছে ওই যে টেবিল ফ্যান’টা দেখছেন, কুড়ি বছরের পুরনো। ওটা ছাড়লে এই মার্চ মাসেও গায়ে চাদর দিতে হয়। আমি তো বললাম, তোরা এসি লাগা, আমাদের লাগবে না।”
বিপিন’বাবু চায়ে চুমুক দেন আর শুনতে থাকেন।
- “তারপর জানেন কি হল? বৌমা এসে আমায় বলে কিনা মা আপনারা এসি না লাগালে, আমরাও লাগাবো না ... কিরকম চালাক মেয়ে দেখেছেন? বাধ্য হয়ে আমাদেরকেও হ্যাঁ বলতে হল। মেয়েটা খুব ভালো।”
বিপিন’বাবু আয়েশ করে চায়ের কাপে শেষ চুমুক দেন। এই সব ছোটো ছোটো টুকরো সংলাপ তাঁর মনের চিত্রনাট্যে গেঁথে যায়।
বাস অফিসের সামনে এসে পড়েছে, বিপিনবাবু নামবেন এখানে। সমস্ত টেকনিশিয়ান সকাল দশটার মধ্যে অফিসে রিপোর্ট করেন। ফিল্ড ম্যানেজার টেকনিশিয়ান’দের কাজ ভাগ করে দেন। তারপর টেকনিশিয়ান’রা, লোকেশনের লিস্ট আর কাস্টমারদের মোবাইল নাম্বার নিয়ে কাজে বেরিয়ে যান। ফিরে এসে তাঁরা রেজিস্ট্রী খাতায় লেখেন সারাদিনের হিসেব। এরপর বাস ধরে বাড়ি। এই হল বিপিন বাবু’র রোজনামচা।
কিন্তু আজকের দিন’টা অন্যরকম। একদম আলাদা।
(৩)
আজই শেষ, আজকে বিপিন’বাবুর রিটায়ারমেন্ট। একটু একটু মন খারাপ লাগছে, আসলে একটু না, বেশ ভালোই। কাল থেকে আর এই টুকরো গল্পগুলো বিপিন’বাবুর জীবনে থাকবে না। নিস্তরঙ্গ রিটায়ার্ড জীবন – কর্মজীবনের যবনিকা পতন।
প্রাইভেট কোম্পানীর চাকরি, তাই রিটায়ারমেন্টের বিশেষ আয়োজন নেই। ফ্লোরের সবাই এসে কথা বলে গেল, একটা হাল্কা জমায়েত। সবাই মিলে শেষ বারের মত অফিসে চা খাওয়া। তারপর কয়েকটা মামুলি বস্তা-পচা কথা।
- “বিপিন’দা, এদিকে এলে একবার ঢুঁ মেরে যাবেন কিন্তু।”
- “সরকারি চাকরি হলে পিএফ পেতে জুতোর শুকতলা ক্ষয়ে যেত।”
- “আপনারা পুরনো এমপ্লয়ী, তাই বেঁচে গেলেন। বাজারের যা অবস্থা, নিউ রিক্রুট’দের কোম্পানি এবার খালি হাতে রিটারমেন্ট করাবে।”
সবাই এমনিতে বিপিন বাবুকে ভালোই বাসে। এই যেমন, ফিল্ড ম্যানেজার ছেলেটি, নাম সত্যেন। বিপিন বাবুর থেকে বয়েসে অনেক ছোট, এম বি এ করেছে, পদমর্যাদায় বিপিন’বাবুর সুপারভাইজার। কিন্তু যন্ত্রের প্রতি বিপিনবাবুর ভালোবাসা দেখে বোধ করি সেও বিপিন’বাবুকে ঠিক প্রথাগত সাব-অর্ডিনেট হিসেবে দেখে না।
অন্তত বিপিন’বাবু তাই ভাবতেন। সত্যিই ভাবতেন।
আজ কেমন যেন সত্যেন তাঁর কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এসে বাড়ির ঠিকানা’টা একবার কনফার্ম করে গেল। অফিস থেকে কিসব ফর্ম্যাল চিঠিপত্র পাঠাবে। কর্পোরেট কালচার ভাই, বুঝে গেছে এ মনুষ্য-যন্ত্রের আয়ু শেষ। এর পেছনে আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। বিপিন’বাবু পিএফ এর কাগজপত্র বুঝে নিয়ে সটান অফিস থেকে বেরিয়ে এলেন।
যন্ত্রকে ভালবাসতে গিয়ে কি মানুষ চেনার ক্ষমতায় মরচে পড়ে গেল বিপিন’বাবুর? যাগ্গে মরুকগে, এসব ভেবে মন খারাপ করে লাভ নেই। বিপিনবাবু একটা ফাঁকা ডি এন ৪৬ দেখে হাত নাড়লেন।
রিটারমেন্টের দিন বলেই এদিন কোনো এসি ফিট করার কাজ ছিল না। বিপিন বাবু তাই দুপুর দুপুর বাড়ি ফিরেছেন। অলরেডি মন খারাপ হতে শুরু করেছে। কাজের দিন হলে আজ বিপিন নিউটাউন বা সোদপুর বা চন্দননগরে নতুন এসি ফিট করতেন। তার বদলে এই ভরদুপুরে কাগজপত্র নিয়ে গঙ্গার জেটিতে দাঁড়িয়ে আছেন, লঞ্চ ধরে, গঙ্গা পেরিয়ে কোন্নগরে বিপিন’বাবুর বাড়ি।
কোন্নগরে নেমে অটো ধরে বাড়ির গলির মুখে নামলেন। বাড়ির সামনে একটা ছোট টেম্পো দাঁড়িয়ে আছে। কি ব্যাপার? পাশের বাড়িতে শ্যামলের জেঠুর এখন-তখন অবস্থা চলছিল, তাহলে কি? বিপিন’বাবুর ভুরুজোড়া কুঁচকে গেল।
জোরে পা চালাতেই, হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠল। সত্যেন ফোন করছে। অফিসে কিছু ফেলে এসেছেন নাকি?
“বিপিন’দা, আরেকটা মেশিন ফিট করতে হবে। আপনাকে একদম বলতে ভুলে গেছিলাম। তারপর খুঁজতে এসে দেখি কখন আপনি বেরিয়ে গেছেন। এইটেই শেষ, কথা দিচ্ছি। প্লিজ, না করবেন না।”
অন্য কেউ হলে রিটায়ারমেন্টের পরে এরকম রিকোয়েস্ট পাত্তাই দিত না। বিপিন’বাবু সুযোগ’টা আঁকড়ে ধরলেন।
“ঠিক আছে, সত্যেন। ঠিকানাটা দাও, আর হ্যাঁ, কাস্টমারের মোবাইল নাম্বারটা এস এম এস করে দিও।”
(৪)
বিপিন’বাবু পরম যত্নে একটা নতুন এসি’র মোড়ক খুলছেন। প্রতিবারের মত এটাও তিনি নিজেই ফিট করবেন। প্রতিবারের মত একই রকম আদর নিয়ে।
কিন্তু এবারেরটা নিজের বাড়িতে।
অফিসের সবাই মিলে চাঁদা করে এসি কিনে বিপিন’বাবুর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। সত্যেন’ই প্ল্যান করেছে। টেম্পো করে সেই এসি কোন্নগরে বিপিনের বাড়ির গলিতে চলে এসেছে। সারপ্রাইজ গিফ্ট। সত্যেন কোম্পানির সাথে কথা বলে স্পেশাল রিবেট করিয়েছে। ওরা সবাই নাকি জানতো, বিপিন’বাবু যন্ত্রের সাথে কথা বলেন। রিটায়ারমেন্টের পরে বিপিন কার সাথে কথা বলবেন? তাই এই উপহার।
বিপিন বাবু এসির মোড়ক খুলে ফেলেছেন, পরম মমতায় এসির পার্ট্স অ্যাসেম্বল করছেন। কপালে বিজ্ বিজ্ করছে ঘামের দানা।
কলকাতা শহর এরকম ছবি রোজ দেখে না কেন?
বিপিন বাবু সোদপুর থেকে ডি এন ৪৬ ধরবেন। প্রতিদিন’ই ধরেন। গত তিন-চার বছর ধরে এটাই বিপিন’বাবুর অফিস যাওয়ার রুট। হিতাচি এসি কোম্পানীর সিনিয়র টেকনিশিয়ন, বয়েস আটান্ন। এত বেশী বয়েসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে এসি সার্ভিসিং করা, ইন্সটল করা একটু চাপ।
ভুল বললাম, অনেকটাই চাপ। সাধারণত: কেউ করে না। এই বয়েসে ম্যাক্সিমাম অফিসে বসে হাল্কা ডেস্ক ওয়ার্ক। খুব বেশী কায়িক পরিশ্রমের কাজ হলে কর্পোরেট অফিসে টানা সেন্ট্রাল এসি বসানোর কাজের দেখভাল। ওসব প্রোজেক্টে অনেক জুনিয়র ছেলে কাজ করে, তাদেরকে দিয়ে ঠিকঠাক কাজ করিয়ে নিতে পারলেই কোম্পানি খুশি।
কিন্তু বিপিন’বাবুর এরকম গেরস্ত বাড়িতে দিনের পর দিন ঘুরে ঘুরে কাজ করতে ভালো লাগে। কেন লাগে সেটা বলা মুশকিল। অনেকগুলো কারণ আছে।
বিপিন বাবু’র মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলে সেদিন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে মুখস্থ করছিল – মোগল সাম্রাজ্য পতনের দশটি কারণ। আসলে মোট নাকি আঠারো’টা কারণ আছে – তার মধ্যে সেরা দশ’টা স্কুলের স্যর বেছে দিয়েছেন। ওগুলোই পরীক্ষায় লিখতে হবে। বাকি আট’টা কারণ ফালতু, ওতে নাম্বার উঠবে না। এখন নাকি পরীক্ষায় ওটাই ট্রেন্ড – ব্রিফ এন্ড টু দ্য পয়েন্ট।
এই ছিমছাম ‘ব্রিফ এন্ড টু দ্য পয়েন্ট’ ব্যাপারটা বিপিন’বাবুর বেশ মনে ধরেছে। বিপিন বাবুও মনে মনে ভাবার চেষ্টা করেন, বাড়ি বাড়ি ঘুরে এসি ফিট করার মধ্যে কি মজা আছে? গেরস্ত বাড়ি’তে যেতে ভালো লাগার অনেক কারণ আছে বটে – এই যেমন ভালো কোয়ালিটির ‘বাড়ির চা’ পাওয়া যায়। কেউ কেউ তো আবার জিজ্ঞেস করে, দাদা চিনি কতো’টা? প্লেন লিকার, না দুধ দিয়ে? কেউ বা আবার একটা অমলেট, বা দু’টো মিষ্টি। অনেকদিন আগে শক্তিগড়ে একজনের বাড়িতে এসি লাগাতে গিয়ে মেঠো ইঁদুরের মতো সাইজের ল্যাংচা খেয়েছিলেন। গৃহকত্রী জিজ্ঞেস করেছিলেন, “দাদা, আরেকটা দিই?”, অসহায় বিপিন মাথা নেড়েছিলেন।
একবার একটা ব্যাচেলর’দের মেসে এসি লাগাতে দিয়ে সে কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি ব্যাপার। সব কটা চব্বিশ-পঁচিশের চাকুরে ছেলে। মফস্বলের ছেলে, কলকাতায় মেস করে থাকে। সবাই মিলে চাঁদা করে এসি কিনেছে, এসির সাথে মাইক্রোওভেন ফ্রি ছিলো বলে চিকেন তন্দুরি কিনেছে। আর তন্দুরি আবার শুকনো গলায় খাওয়া যায় নাকি? তাই দু’বোতল ওল্ড মঙ্ক’ও এসির সাথে সাথে মেসে ঢুকে পড়েছে। তবে ছেলেগুলো সভ্য-ভদ্র। দুম করে খেতে শুরু করে দেয় নি। এসি ইন্সটল হয়ে যাওয়ার পরে একজন, খুব আস্তে জিজ্ঞেস করল, দাদা, আপনার কি ওসব চলে?
বিপিন’বাবু বিলক্ষণ সমঝদার ব্যক্তি, সামান্য ইশারাই যথেষ্ট। সুতরাং চলেছিল। বেশ ভালোই চলেছিল। ইন ফ্যাক্ট, ওই গন্ধ নিয়ে বাড়ি ফিরলে বৌ পেটাতে পারে এই ভয়ে বিপিন’বাবু সেদিন আর বাড়ি ফেরেন নি। মেসেই একটা তক্তপোষে রাত কাটিয়ে দিয়েছিলেন।
হ্যাঁ যা বলছিলাম, বিপিন’বাবু অনেক ভেবে বার করেছেন, ছুটকো ছাটকা বিষয় বাদ দিলে তাঁর এই বাড়ি বাড়ি ঘুরে এসি বসাতে ভালো লাগার কারণ আসলে ঠিক দু’টো।
প্রথম হচ্ছে ১৯৬৮ সালের মে মাসের পচা গরমে অযান্ত্রিক দেখা। অযান্ত্রিকের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে সেদিন স্পেশাল শো ছিল প্রিয়া’তে।
বিপিনের তখন বারো বছর বয়েস।
খুব একটা বেশী কিছু বোঝার বয়েস নয়। বিপিন বোঝেন’ও নি। শুধু হাঁ করে দেখেছিলেন, মানুষের সাথে যন্ত্রের প্রেম। সে প্রেমে কোনও ব্যারিটোন কন্ঠের দাপট নেই, সুরেলা কন্ঠের মায়া’ও নেই, আছে কেবল ১৯২০ সালের শেভ্রলে গাড়ির বিচ্ছিরি হর্ন আর এক মায়াবী প্রেম।
সেই থেকে বিপিন’বাবু যন্ত্রের ভক্ত, থুড়ি প্রেমিক। কিভাবে একটা যন্ত্র কাজ করে, কাজ করতে করতে কেন যন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সেটা যন্ত্র কিভাবে আওয়াজ করে জানান দেয়।
এই যেমন ভালো সার্ভিস করা মেশিন কিরকম তেল খাওয়া আওয়াজ দেয়। ঠিক যেন মাছের মাথা দিয়ে ঘন ডাল আর বাটা মাঝের পাতলা ঝোল খেয়ে, ঠাণ্ডা শান দেওয়া লাল মেঝেতে কেউ নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে।
একটা নিয়মিত মসৃণ শব্দ। সমান ব্যবধানে উঠছে, পড়ছে।
আর যে যন্ত্র আদর পায় না? অনিয়মিত, উঁচু নিচু শব্দ। ঠিক যেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেউ কাঁদছে। ঘ্যাটর ঘ্যাটর করে আওয়াজ উঠছে, নামছে। ক্যাঁচ কোঁচ, ক্যাঁচ ক্যাঁচ কোঁচ, ক্যাঁচ ক্যাঁচ কোঁচ। কোনো নিয়ম নেই। ক’টা ক্যাঁচের পরে ক’টা কোঁচ হবে কেউ জানে না। মাঝে মাঝে তীব্র বেতালা বেসুর ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ শব্দ, ঠিক যেন কান ধরে টানছে কেউ।
এ ভাবে চলতে চলতে, কথা নেই বার্তা নেই, দুম করে একটা শব্দ। হঠাৎ সব চুপ। বাচ্চা ছেলে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকলে অসহিষ্ণু বাবা-মা মেজাজ হারিয়ে চড় মেরে দিলে, গাল ফুলিয়ে চুপ হয়ে যাওয়ার মত।
মোদ্দা কথা বিপিন’বাবুর দৃঢ় বিশ্বাস, যন্ত্র’কে ভালবাসলে সেও উল্টে ভালোবাসে। যন্ত্র মানুষের কথা শোনে। ইন ফ্যাক্ট যন্ত্রের প্রাণ আছে এটা’ও বিপিন বাবু প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু সবাই সেটা টের পায় না বলে কাউকে বলেন নি।
(২)
দ্বিতীয় কারণ’টা অবশ্য ‘যান্ত্রিক’ নয়, মানবিক।
গেরস্ত বাড়িতে বেশীরভাগ সময়’ই নতুন এসি মেশিন বসায়। সব চেয়ে কমন ছবিটা হল - স্বামী-স্ত্রী চাকরি করে, পরিবারে সাম্প্রতিক আর্থিক সচ্ছলতা একটু বেড়েছে। প্লাস প্রিন্ট আর অডিও-ভিসুয়াল মিডিয়ায় দিবারাত্র বিজ্ঞাপন। ফল হচ্ছে কত টনের এসি লাগবে সে সম্পর্কে টনটনে জ্ঞান, আর মাত্র কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে একটি সুশোভিত যন্ত্র – ওপরে জ্বলজ্বল করছে পাঁচটি তারা। পাঁচতারা জীবন কে না চায়?
বিপিন’বাবুর দেখতে ভালো লাগে - নতুন দম্পতি হাঁ করে দেখছে এসি মেশিনের না-খোলা মোড়ক’টা। চোখে মুখে কি ভীষণ একটা প্রত্যাশা। বিপিনের হাত ধরে তাদের প্রতিদিনের চাওয়া-পাওয়া, অল্প-পাওয়া আর একদম’ই না-পাওয়া গুলো যেন এক লহমায় মিলিয়ে যাবে। বিপিন বাবু পকেট থেকে সেলোটেপ কাটার ছুরি’টা বার করেন, আর লুকিয়ে লুকিয়ে দু’জোড়া চোখ দেখতে থাকেন। তাঁর হাতেই রয়েছে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ।
এসি ফিট করে দেওয়ার পরে ম্যান্ডেটরি ফিল্ড টেস্টিং করতে হয়। দশ ফুট বাই দশ ফুট জুড়ে একটা ঝোড়ো ঠান্ডা হাওয়া। স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে একটা তৃপ্তির দৃষ্টি-বিনিময়। বিপিনের নিজেকে সর্বশক্তিমান মনে হয়।
অন্য রকম’ও হয়। রিটায়ার্ড বাবা-মা’র শোবার ঘরে প্রবাসী ছেলে এসি কিনে লাগাচ্ছে। বিপিন’বাবু চা খেতে খেতে ছেলের মা’র সাথে কথা বলছেন।
- “জানেন দাদা, আমার বৌমা খুব ভালো মেয়ে। ছেলে-বৌ নিজেদের ঘরে এসি লাগাবে ঠিক করেছে। আমাদেরকে বলল তোমাদের ঘরেও লাগাব। বিছানার মাথার কাছে ওই যে টেবিল ফ্যান’টা দেখছেন, কুড়ি বছরের পুরনো। ওটা ছাড়লে এই মার্চ মাসেও গায়ে চাদর দিতে হয়। আমি তো বললাম, তোরা এসি লাগা, আমাদের লাগবে না।”
বিপিন’বাবু চায়ে চুমুক দেন আর শুনতে থাকেন।
- “তারপর জানেন কি হল? বৌমা এসে আমায় বলে কিনা মা আপনারা এসি না লাগালে, আমরাও লাগাবো না ... কিরকম চালাক মেয়ে দেখেছেন? বাধ্য হয়ে আমাদেরকেও হ্যাঁ বলতে হল। মেয়েটা খুব ভালো।”
বিপিন’বাবু আয়েশ করে চায়ের কাপে শেষ চুমুক দেন। এই সব ছোটো ছোটো টুকরো সংলাপ তাঁর মনের চিত্রনাট্যে গেঁথে যায়।
বাস অফিসের সামনে এসে পড়েছে, বিপিনবাবু নামবেন এখানে। সমস্ত টেকনিশিয়ান সকাল দশটার মধ্যে অফিসে রিপোর্ট করেন। ফিল্ড ম্যানেজার টেকনিশিয়ান’দের কাজ ভাগ করে দেন। তারপর টেকনিশিয়ান’রা, লোকেশনের লিস্ট আর কাস্টমারদের মোবাইল নাম্বার নিয়ে কাজে বেরিয়ে যান। ফিরে এসে তাঁরা রেজিস্ট্রী খাতায় লেখেন সারাদিনের হিসেব। এরপর বাস ধরে বাড়ি। এই হল বিপিন বাবু’র রোজনামচা।
কিন্তু আজকের দিন’টা অন্যরকম। একদম আলাদা।
(৩)
আজই শেষ, আজকে বিপিন’বাবুর রিটায়ারমেন্ট। একটু একটু মন খারাপ লাগছে, আসলে একটু না, বেশ ভালোই। কাল থেকে আর এই টুকরো গল্পগুলো বিপিন’বাবুর জীবনে থাকবে না। নিস্তরঙ্গ রিটায়ার্ড জীবন – কর্মজীবনের যবনিকা পতন।
প্রাইভেট কোম্পানীর চাকরি, তাই রিটায়ারমেন্টের বিশেষ আয়োজন নেই। ফ্লোরের সবাই এসে কথা বলে গেল, একটা হাল্কা জমায়েত। সবাই মিলে শেষ বারের মত অফিসে চা খাওয়া। তারপর কয়েকটা মামুলি বস্তা-পচা কথা।
- “বিপিন’দা, এদিকে এলে একবার ঢুঁ মেরে যাবেন কিন্তু।”
- “সরকারি চাকরি হলে পিএফ পেতে জুতোর শুকতলা ক্ষয়ে যেত।”
- “আপনারা পুরনো এমপ্লয়ী, তাই বেঁচে গেলেন। বাজারের যা অবস্থা, নিউ রিক্রুট’দের কোম্পানি এবার খালি হাতে রিটারমেন্ট করাবে।”
সবাই এমনিতে বিপিন বাবুকে ভালোই বাসে। এই যেমন, ফিল্ড ম্যানেজার ছেলেটি, নাম সত্যেন। বিপিন বাবুর থেকে বয়েসে অনেক ছোট, এম বি এ করেছে, পদমর্যাদায় বিপিন’বাবুর সুপারভাইজার। কিন্তু যন্ত্রের প্রতি বিপিনবাবুর ভালোবাসা দেখে বোধ করি সেও বিপিন’বাবুকে ঠিক প্রথাগত সাব-অর্ডিনেট হিসেবে দেখে না।
অন্তত বিপিন’বাবু তাই ভাবতেন। সত্যিই ভাবতেন।
আজ কেমন যেন সত্যেন তাঁর কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এসে বাড়ির ঠিকানা’টা একবার কনফার্ম করে গেল। অফিস থেকে কিসব ফর্ম্যাল চিঠিপত্র পাঠাবে। কর্পোরেট কালচার ভাই, বুঝে গেছে এ মনুষ্য-যন্ত্রের আয়ু শেষ। এর পেছনে আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। বিপিন’বাবু পিএফ এর কাগজপত্র বুঝে নিয়ে সটান অফিস থেকে বেরিয়ে এলেন।
যন্ত্রকে ভালবাসতে গিয়ে কি মানুষ চেনার ক্ষমতায় মরচে পড়ে গেল বিপিন’বাবুর? যাগ্গে মরুকগে, এসব ভেবে মন খারাপ করে লাভ নেই। বিপিনবাবু একটা ফাঁকা ডি এন ৪৬ দেখে হাত নাড়লেন।
রিটারমেন্টের দিন বলেই এদিন কোনো এসি ফিট করার কাজ ছিল না। বিপিন বাবু তাই দুপুর দুপুর বাড়ি ফিরেছেন। অলরেডি মন খারাপ হতে শুরু করেছে। কাজের দিন হলে আজ বিপিন নিউটাউন বা সোদপুর বা চন্দননগরে নতুন এসি ফিট করতেন। তার বদলে এই ভরদুপুরে কাগজপত্র নিয়ে গঙ্গার জেটিতে দাঁড়িয়ে আছেন, লঞ্চ ধরে, গঙ্গা পেরিয়ে কোন্নগরে বিপিন’বাবুর বাড়ি।
কোন্নগরে নেমে অটো ধরে বাড়ির গলির মুখে নামলেন। বাড়ির সামনে একটা ছোট টেম্পো দাঁড়িয়ে আছে। কি ব্যাপার? পাশের বাড়িতে শ্যামলের জেঠুর এখন-তখন অবস্থা চলছিল, তাহলে কি? বিপিন’বাবুর ভুরুজোড়া কুঁচকে গেল।
জোরে পা চালাতেই, হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠল। সত্যেন ফোন করছে। অফিসে কিছু ফেলে এসেছেন নাকি?
“বিপিন’দা, আরেকটা মেশিন ফিট করতে হবে। আপনাকে একদম বলতে ভুলে গেছিলাম। তারপর খুঁজতে এসে দেখি কখন আপনি বেরিয়ে গেছেন। এইটেই শেষ, কথা দিচ্ছি। প্লিজ, না করবেন না।”
অন্য কেউ হলে রিটায়ারমেন্টের পরে এরকম রিকোয়েস্ট পাত্তাই দিত না। বিপিন’বাবু সুযোগ’টা আঁকড়ে ধরলেন।
“ঠিক আছে, সত্যেন। ঠিকানাটা দাও, আর হ্যাঁ, কাস্টমারের মোবাইল নাম্বারটা এস এম এস করে দিও।”
(৪)
বিপিন’বাবু পরম যত্নে একটা নতুন এসি’র মোড়ক খুলছেন। প্রতিবারের মত এটাও তিনি নিজেই ফিট করবেন। প্রতিবারের মত একই রকম আদর নিয়ে।
কিন্তু এবারেরটা নিজের বাড়িতে।
অফিসের সবাই মিলে চাঁদা করে এসি কিনে বিপিন’বাবুর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। সত্যেন’ই প্ল্যান করেছে। টেম্পো করে সেই এসি কোন্নগরে বিপিনের বাড়ির গলিতে চলে এসেছে। সারপ্রাইজ গিফ্ট। সত্যেন কোম্পানির সাথে কথা বলে স্পেশাল রিবেট করিয়েছে। ওরা সবাই নাকি জানতো, বিপিন’বাবু যন্ত্রের সাথে কথা বলেন। রিটায়ারমেন্টের পরে বিপিন কার সাথে কথা বলবেন? তাই এই উপহার।
বিপিন বাবু এসির মোড়ক খুলে ফেলেছেন, পরম মমতায় এসির পার্ট্স অ্যাসেম্বল করছেন। কপালে বিজ্ বিজ্ করছে ঘামের দানা।
কলকাতা শহর এরকম ছবি রোজ দেখে না কেন?
দারুণ ভালো গল্প অনির্বাণ। পড়ে মন ভালো হয়ে গেল।
ReplyDeleteট্যাগ খুঁজে দিলে :)
DeleteBhalo galpo ebong lekha
ReplyDelete:-)
Deletebhalo laglo
ReplyDelete:-)
Deletebhishon bhaalo laaglo pore :)
ReplyDelete:-)
Deletekhub-i bhalo.
ReplyDeletetor theke 'e tumi kemon tumi' r chords gulo chai ..
DeleteBesh besh
ReplyDelete:)
DeleteDarun ...........
ReplyDeleteswagotom Krishanu ..
DeleteSundor golpo, jhorjhore bhasa... Aro erokom lekhar opekhhay roilam
ReplyDeleteswagotom Krishanu ..
DeleteApurbo..asadharon..kub bhalo lgalo re..r o anek chai
ReplyDeletethenku ..
DeleteKhub bhalo hoyechhe - chaliye ja
ReplyDelete- Somanko
arre, kotodin bade ..
DeleteGorto da! Byapok!
ReplyDelete:)
DeleteDarun hoechhe eta...khanikta satyajit er chhoto galper chhoa achhe...chaliye jao
ReplyDeleteProtisthito gachher chayay tober gachh ..
Deletekhub bhalo golpo...kintu naam na ektu anya kichu hole better hoto
ReplyDeletePlz anyo kichhu akta suggest korun dekhi ..
DeleteFresh jharjhare bhasa....valo laglo pore
ReplyDeleteSwagatam shuvadip ..
Deletekhub sundar
ReplyDelete:)
Deleteঅসাধারণ লাগলো অনির্বাণ :) এই গরমেও একটা ঠান্ডা অনুভূতি হল।
ReplyDeleteশুধু একটা জিনিস, দ্বিতীয় অংশের শেষের দিকে একজায়গায় 'পিবিন' হয়ে গেছে, ওটা ঠিক করে নিয়ো।
thanks, kore dilam ..
ReplyDeleteপরের লেখাটা তাড়াতাড়ি নামা দেখি! ক'দ্দিন ধরে একই লেখা জ্বলজ্বল করছে…।
ReplyDeleteসত্যি বলব? হপ্তায় একটা করে চাই।
চাই তো আম্মো, কিন্তু ওই আর কি ...
Deleteকলকাতা শহর এরকম ছবি রোজ দেখে না কেন?
ReplyDeleteসত্যিই তো। দেখাটা কি খুব শক্ত? তাও দেখিনা কেন?
প্রশ্ন গুলো সহজ আর উত্তর'ও তো জানা, তাই না তথাগত?
Deleteবেশ ভালো লাগলো। সুন্দর।
ReplyDeleteআপনারা না মাইরি, নাম লিখতে ইচ্ছে না করলে একতা 'ছদ্মোনাম' ও তো লিখতে পারেন। তা না করলে আমায় অই ধন্যবাদ আগন্তুক বলে কাজ সারতে হয়।
Deleteঅবশ্য মাঝে মাঝে ফ্যান্টাসাইজ করি চলমান অশরীরী - ডেনকালীর সার্ভার ব্যবহার করে যিনি চুপকথায় কমেন্ট করে যান, কিন্তু তার নাম কেউ জানতে পারে না।
Anirbaan,
ReplyDeleteHothat kore pore paoa choddo anar moto apnaer ei blog ta peye gelam .. anek din por ektu mile jaoa abosor er fakey tai tuk tuk kore lekha gulo pore jachhi .. sobetei ekdine comment korle kemon cliche hoye jai, tai apatoto comment na kore mon diye lekha gulo pore nie, apni borong mon bhalo korar e rokom chhobi anktey thakun ..
Ar hya .. DN 46 bus kintu dankuni thekey karunamoyee jai ... sodepur e noy :P
আর বলবেন না মশাই, অই পথে যাতায়াত করি নি কোনোদিন। বেশ ফূর্তিতে ছিলাম যে বাসের নামটা বানিয়ে বানিয়ে দিলাম, কেউ ভুল ধরবে না। কিন্তু হা হতোস্মি - আপনাকে নিয়ে তিনজন হল।
Deleteবোঝেন'ই তো, একটু আধটু গুল না মারলে গপ্প দাঁড়ায় না। যতই ফিনশনি করি না কেন, আসলে তো গপ্পের টিউশনি। তবে হ্যাঁ, এই যে আপনার প্রশংসা - আমার কান সটান লাল, থুড়ি বেগুনী হয়ে গেল। ভেজে ফেললেই হয় আর কি।
চুপকথায় স্বাগত।
khub bhalo laglo lekhata.. ami tomar blog pori majhe majhe..comment bodhhoy ei prothom bar korchi....likhte thako :)
ReplyDeletee baba .. rom korle ki kore cholbe .. lokjoner utsaho na pele lalmohonbabu obdi likhte parten na, ami kon chhar ..
DeleteDarun Darun
ReplyDelete:o
ReplyDelete