Monday, May 12, 2014

রিগিং

(১)
রাই আজ খুব উত্তেজিত। গত কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনার বারুদ জমা হচ্ছিল। পুরো কলেজ রাজনীতি নিয়ে তোলপাড়। শুধু কলেজের ভোট বা স্রেফ রাজ্য-রাজনীতি তো নয়, একেবারে রাষ্ট্র-রাজনীতি। পাঁচ বছরে একবার, হুঁ হুঁ বাবা। লোকসভা ভোট বলে কথা।


দু’বছর আগে ভোটার আইডি কার্ড হাতে পেয়ে রাই খুব একটা বুঝতে পারে নি যে, এটা খায়, না মাথায় দেয়। ফালতু এক টুকরো কাগজ। একদম সাদামাটা। ওপরে সাদা-কালো বিচ্ছিরি ভৌতিক ছবি। তখন ক্লাস টুয়েলভ, পড়াশোনার তুমুল আথাল পাথাল। ভোটার আইডি কার্ডটা মা দেরাজে তুলে রেখে দিয়েছিলেন।

গতকাল সেই মহার্ঘ্য কার্ড ঝেড়ে ঝুড়ে বার করা হয়েছে। শ্রীনীতা রায়, পিতা সুনীল রায়। পোঃ কৃষ্ণনগর, জেলাঃ নদীয়া। রাই এবার প্রথম ভোট দেবে।
রাই’দের ওয়ার্ডে টান টান উত্তেজনা। খবরের কাগজের ভাষায়, স্পর্শকাতর এলাকা।

দুই তরফের পার্টি অফিস থেকেই ভোটার লিস্টের তালিকা ধরে সবাইকে বলতে আসে, এবার’ও এসেছে।

ভোর ভোর শাসক দল এসে বলে গেছে, ‘প্লিজ বৌদি, সকাল সকাল বুথে চলে যাবেন। বেলা হয়ে গেলেই মুশকিল, গরমে আপনারাই কষ্ট পাবেন। প্লিজ্‌, আমাদেরকেই ভোট’টা দেবেন কিন্তু।’
বিকেল বেলায়, বিরোধী শিবিরের হামলা, ‘রাই তো এবার প্রথম ভোট দেবে, দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেল। মনে করে নিয়ে যাবেন কিন্তু ওকে। নতুন প্রজন্ম তো – এরা ভোট দিতেই চায় না। দেশের উন্নতি নিয়ে কোন ইয়ে নেই।’

- "হ্যাঁ, নিশ্চয়ই নিয়ে যাব।”
- ‘আচ্ছা বৌদি, এগোলাম তাহলে। পশ্চিমপাড়া’টা পুরোটাই কভার করতে হবে আজকে। আপনাদের বাড়ির মোট তিনটে ভোট ধরে রাখলাম তাহলে।’
রাই’এর মা বলে ওঠেন, ওটা চার হবে। আপনারা বোধহয় রাই’কে আবার ভুলে গেলেন।

- না তো বৌদি, এই তো ইলেকশন কমিশনের কাগজ, তিন জনের নাম’ই তো লেখা। আপনি, দাদা, রাই।
- হুম্‌ম্‌, আর মার নাম কই? আপনাদের মাসীমা না হয় এখন আর তেমন চলাফেরা করতে পারেন না। তাই বলে ভোটার লিস্ট থেকে নামটাই বাদ দিয়ে দিলেন?
- আরে তাই তো। অ্যাই শুভ, ভালো করে দেখ্‌ তো। মাসীমার নামটা কোথায়?

প্রায় পনেরো কুড়ি মিনিট ধরে ছাব্বিশ নাম্বার ওয়ার্ডের ভোটার লিস্ট তন্নতন্ন করে খোঁজা হল। নাহ্‌, শ্রীমতী কুসুম রায়ের নাম লিস্টে সত্যিই নেই। স্বাধীনতার দশ বছর পর থেকে প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনে যে ভদ্রমহিলা ভোট দিয়ে এসেছেন, তাঁর নাম লিস্টে নেই। কেন নেই, তা জানার উপায় নেই। কেউ উত্তর জানে না। শুধু তাই নয়, ভোটার লিস্ট আর ঠিক করার উপায়’ও নেই। ইলেকশন কমিশন তিন মাস আগে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, কোনো অসঙ্গতি থাকলে দু’সপ্তাহের মধ্যে জানাতে। তার পরে কোনও নালিশ গ্রাহ্য করা হবে না।

- ইয়ে বৌদি, এটা তো আর কিছু করার নেই। মাসীমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন। এবার আর ওনার ভোট দেওয়া হবে না ...

রাই এর মধ্যে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে দুই যুযুধান প্রার্থীর বক্তব্য শুনেছে। কাউকেই খুব একটা পদের মনে হয় নি। দুজনের বক্তব্যেই খুব একটা স্বচ্ছতা নেই। পার্টির ওপরমহল যা যা বুলি আওড়াতে বলে দিয়েছে, সেগুলোই মঞ্চে উগরে যাচ্ছেন। নিজস্ব কোনো মতামত নেই, ফালতু।

নির্দল হয়ে যারা দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের হয়ে আবার প্রচার নেই। তাঁদের পরিচয় কি, বর্তমান ব্যবস্থায় কি খারাপ, তাঁরা কি কি পরিবর্তন আনবেন, তাঁদের ভোট-পরবর্তী প্রতিশ্রুতি’ই বা কি, কোনোটাই খুব একটা পরিষ্কার নয়।
বাবা সন্ধ্যেবেলা ফিরলে, মা কথাটা পাড়লেন, শুনছো, সকাল বেলা পলাশ’রা এসেছিল। ভোটার লিস্ট চেক করে গেল।

- আচ্ছা।
- না আচ্ছা নয়, মায়ের নাম নেই।
- যাচ্চলে, মাকে বলেছো?
- না বাবা, আমার সাহসে কুলোয় নি। কবে থেকে সব্বাই’কে বলে বেড়াচ্ছেন – ভোট দেবেন। বাড়ি থেকে তো বেরোন’ই হয় না, এই অজুহাতে যদি একটু বেড়িয়ে আসা হয়। খুব আশা করে বসে আছেন। একবার তো বললেন, এইটেই নাকি ওনার শেষ ভোট।
- সে না হয়, সবাই মিলে ভোট দিতে যাব। ভোট নাই বা দিল, মা’ও যাবে আমাদের সাথে। এমনিই, ঘুরতে।
- যাও, সেটা গিয়ে তুমি’ই বল তাহলে। মা খুব দুঃখ পাবেন। আমি বলতে পারব না বাপু।

কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল সুনীল রায়ের সাহসের ভান্ডার’ও তথৈবচ।

অতঃপর সুনীল রায় ও শাশ্বতী রায়, মানে আমাদের রাই’এর বাবা-মা, রাইকে পাকড়াও করেছেন, এই আপাত দুঃসংবাদ’টি ঠাকুমা’কে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

(২)
নাটকের পরের পর্বে, রাই আমসত্ত্ব চাখতে চাখতে ঠাকুমার ঘরে। পুরোনো কায়দার চোদ্দো-পনেরো ফুট উচ্চতার ঘর, ঘরের সাথে অ্যাটাচ্‌ড ... না, টয়লেট নয়, ঠাকুরঘর।

রেডিও’তে বাজছে,
'আকাশ প্রদীপ জ্বলে, দূরের তারার পানে চেয়ে/
আমার নয়ন দু’টি, শুধুই তোমারে চাহে/
ব্যাথার বাদলে যায় ছেয়ে।'

রাই ডাকে, ঠাম্মা, ও ঠাম্মা, শুনছো?
কুসুম রায় ঝিমোচ্ছিলেন। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পরে আরামের ভাতঘুম।

রাই আবার ডাকল, শোনো না?
কুসুম ঘুম জড়ানো গলায় বললেন, কি রে?

- আমাদের এখানে ভোটের ডেট দিয়ে দিয়েছে, জানো? সামনের বারো তারিখ। বাবা-মা দু’জনের’ই অফিস বন্ধ সেই জন্য, আমারও স্কুল ছুটি।
- বেশ হয়েছে। সবাই মিলে জলদি জলদি ভোট দিয়ে পালিয়ে আসব।
- তোর নাম লিস্টে উঠেছে?
- হ্যাঁ, উঠেছে। ঠাম্মা, তুমি কবে থেকে ভোট দিচ্ছ?
- সে অনেক দিনের কথা। ষাটের দশক হবে। একবার কি হয়েছিল জানিস, কলেজে ভোট। আমি তখন বি এ সেকেন্ড ইয়ার। তোর দাদু এম এস সি ফাইনাল ইয়ার। আমাদের তখন একটু ভাব-সাব হয়েছে। সেই প্রথমবার আমার নাম ভোটার লিস্টে।

বাবা-মা যে দুঃসংবাদের দূত করে রাই’কে পাঠিয়েছেন, সেটা জলদি বলে ফেলা জরুরী। রাই সেটা বিলক্ষণ টের পাচ্ছে। কিন্তু তবুও রাই ঠাম্মাকে আটকাল না। ঠাম্মার গল্প মন দিয়ে শুনলে বরং ঠাম্মা একটু আনন্দ পাবে। শ্রোতা পায় না তো। দাদু চলে গেছে সেই দেড় বছর হল, তারপর থেকেই ঠাম্মা একটু চুপচাপ হয়ে গেছে। কখনও সখনও মুড এলে গল্প করে।
মন খারাপের খবর না হয় পরেই দেওয়া যাবে।

- তো কলেজে সেবার ভোট। জি এস পোস্টের জন্য তোর দাদু কনটেস্ট করছে। এমনি তোর দাদুকে কলেজে সবাই পছন্দ করে, জিতেই যাবে। নিজের পার্টি তো বটেই, অপোজিশন দলের সাথেও রাত-দিন হাসিঠাট্টা, কবিতা, নাটক, ক্রিকেট।
তাও ভোট বলে কথা। উনি যতই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেরোন না, আমার তো ভালোই টেনশন হচ্ছে, বুঝলি। প্রথম প্রথম আলাপ হয়েছে, পূর্বরাগের সব কটা সিম্‌টম্‌ দেখা যাচ্ছে। কলেজের বন্ধুরা দু’একজন জানে, বাকিরা আন্দাজ করে। বয়েসটাও তখন সব্বোনেশে, সবে উনিশে পা দিয়েচি। মোদ্দা কথা, তোর দাদুর হার মানে আমার হার। তোর দাদুর জিত মানে যেন আমারই জিত।

- তো বুঝলি দিদুভাই, আমি করেছি কি, দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে, ভালো করে সেজেগুজে, পাটভাঙ্গা শাড়ি-ব্লাউজ পড়ে, স্নো পাউডার মেখে হোস্টেল থেকে বেরিয়েছি।
বেলা চারটে অব্দি ভোট চলবে। সকাল বেলায় লোকে প্রচুর উৎসাহ নিয়ে লাফালাফি ঝাঁপাঝাঁপি করে। শেষ বেলায় ভোট দিলে আর লাইনে দাঁড়াতে হবে না।
- গিয়ে তোর দাদুকে আর খুঁজে পাই না। সে আমলে তো আর মোবাইল ফোন নেই যে তোদের মত টুকুস করে ফোন করে দেব। কি মুশকিল, লোকটা গেল কোথায়?

- নিয়ে আমি তো অপেক্ষা করছি। করছি তো করছিই। কি রাগ ধরছিল ভাব তো? কুড়ি মিনিট হয়ে গেছে, বুথের বাইরে গম্ভীরভাবে ঘোরাফেরা করছি। তাও আসছে না। শেষমেশ আমার আর ধৈর্য্যে কুলোল না। আরেকবার বুথের সামনের রাস্তাটা, যেটা হোস্টেলের দিকে গেছে, সেটা আপাদমস্তক দেখে নিয়ে, খুঁজে পেলাম না, আর ভোট দিতে ঢুকে পড়লাম।

প্রিসাইডিং অফিসার আমার নাম জানতে চাইলেন। বললাম, কুসুম সেন। বিয়ের আগের নাম, সেন।
কি রে, শুনছিস কি?

- হ্যাঁ রে বাবা, শুনছি, শুনছি। স-ও-ব শুনছি। তুমি বলে যাও।
রাই ধীরেসুস্থে আমসত্ত্বের টুকরোটায় উল্টো দিকটায় মনসংযোগ করল।

- হুঁ, কি জানি বাবা, তোদের সব সময়টাতেই বড়ো ছটফটে ভাব। শোন্‌ তাহলে।
তখন তো কম্পিউটার নেই যে টুক করে টাইপ করবে আর নাম ভেসে উঠবে। প্রিসাইডিং অফিসার হচ্ছেন বিরাট চওড়া গোঁফওলা এক রিটায়ার্ড আর্মির ডাক্তার। তিনি একটা বিরাট একটা জাবদা খাতা খুলে, একটা একটা করে নাম মিলিয়ে মিলিয়ে কি একটা খুঁজে বার করলেন। বোধহয় আমার নামটাই।

আর তারপর’ই কড়া ধমক।

রাই গল্পের ফ্লো আটকে মুখ খুলল, সে কি? বকলো তোমাকে? কেন বকল?
আঃ শোন’ই না, সেটাই তো বলছি।

প্রিসাইডিং অফিসার ভদ্রলোক বললেন, এই তো আপনার ভোট পড়ে গেছে, দুপুর দেড়টায়। পরিষ্কার লেখা আছে নাম কু--সু--ম সে--ন। বি এ সেকেন্ড ইয়ার, ফিলজফি। কি আপনি’ই তো?
আমার ততক্ষণে সব গুলিয়ে গেছে, বুঝলি দিদিভাই। মাথা কাজ করছে না। নেশাগ্রস্তের মত মাথা নাড়লাম। হ্যাঁ, আমিই। আমিই কুসুম সেন।

প্রিসাইডিং অফিসার বলেই যাচ্ছেন, আপনি ফের আঙ্গুলের কালি মুছে দ্বিতীয় বার ভোট দিতে এসেছেন? লজ্জা করে না আপনাদের? আপনারা সমাজের শিক্ষিত মানুষ হয়ে যদি এরকম করেন তাহলে পরের প্রজন্ম কি শিখবে?
বুঝছিস্‌ দিদুভাই, রাগে-দুঃখে-অপমানে আমার চোখে তখন জল চলে এসেছে। সব ঝাপসা দেখছি। লজ্জায় প্রিসাইডিং অফিসারের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছি না, উত্তর দেব কি?
কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বুথের বাইরে এসে দেখি,  মূর্ত্তিমান দাঁড়িয়ে।

আমায় দেখে বলে কিনা, সে কি? তুমি কখন এলে? দেখি নি তো? মুখ চোখের এরকম অবস্থা কেন?
- তুমি কোথায় ছিলে?
- এইতো কলেজের বাইরে একটু ... ভোট মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে। আমি সন্দীপ’দের সাথে সিগারেট কিনতে গেসলাম। যাগ্‌গে, তুমি আবার ভোট দিতে যেও না কিন্তু।

- মানে?
- তোমার ভোট পড়ে গেছে। দেড়টা বেজে গেস্‌ল। মোটামুটি সব ভোট পড়ে গেছে। তাও তুমি আসছো না দেখে শ্যামলীকে বললাম, তোর বৌদি বোধহয় আটকে পড়েছে, তুই গিয়ে ওর ভোট’টা দিয়ে দে। একটা সিওর ভোট এরকম ভাবে মিস হয়ে যাওয়ার জাস্ট কোন মানে হয় না। শ্যামলী তোমায় বলে নি? পই পই করে বললাম যে হোস্টেলে ফিরে তোমায় বলে দিতে ...

- এ তো পরিষ্কার রিগিং ...... খবরের কাগজে ঠিক’ই বলে। তোমার পার্টি রিগিং করে ভোটে জেতে।
- দুত্তোর, কি যন্ত্রণা, সবাই তো জানতোই তুমি আমাকে ভোট দেবে। তাই কেউ আপত্তি করে নি। অন্য পার্টির পোলিং এজেন্টরাও জানত। প্রিসাইডিং অফিসারকে অবশ্য বলা হওয় নি, উনি অত খেয়ালও করেন নি। এটাকে কি রিগিং বলে? প্লিজ্‌ একটু মাথা ঠান্ডা করে ভাবো, এটাকে কি রিগিং বলে?

- আর মাথা ঠান্ডা। তখন আমি কিছু শুনলে তো। মুখ চোখ লাল করে, দুম্‌ দুম্‌ করে পা চালিয়ে সো-ও-জা হোস্টেলে ফেরত। সে কি রাগ।
পড়ে সবাই বলেছিল, তোর দাদুর মুখটা নাকি দেখার মত হয়েছিল। ঠাম্মার ফোকলা মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
- তোর দাদু কিন্তু ভোটে জিতেছিল, জানিস? ভোটে জিতেও অবিশ্যি ছেলের মুখে হাসি ছিল না। পাক্কা এক সপ্তাহ কথা বলি নি কিনা। তারপর অ্যাকাডেমীতে টিনের তলোয়ার ...
ঠাম্মার চোখের কোণায় জল চিকচিক করছে।

রাই জানে আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জলের ফোঁটাগুলো ঠাম্মার মুখের সুস্পষ্ট খাঁজগুলোয় পথ খুঁজে নেবে।

(৩)
রায় পরিবার ভোট দিয়ে ঘরে ফিরছে। দুটো রিক্সায়। সুনীল-শাশ্বতী সামনের রিক্সায়। নাতনী আর ঠাকুমা বেশ খানিকটা পেছনে।
রাই আরেকবার রিক্সাওলা’কে বলল, কাকু একটু আস্তে চালাবেন। রাস্তাটা বড্ডো উঁচুনিচু।

রাই হাত শক্ত করে ঠাকুমা’কে ধরে আছে। কুসুম রায় কাঁপা কাঁপা হাতে ধরে আছেন নাতনী’কে। দু’জনের চোখে চোখে কথা হচ্ছে। কেউ যদি খুব মন দিয়ে লক্ষ্য করে তাহলে বুঝতে পারবে, কুসুম রায়কে চোখের ইশারায় প্রবোধ দিচ্ছে তাঁর নাতনী শ্রীনীতা রায়, ওরফে আমাদের রাই।

কুসুম রায়ের চোখে কিসের একটা উৎকন্ঠা, আর রাই এর চোখে প্রশ্রয়।
- দিদুভাই, এটা কি ঠিক করলাম আমরা?
- হ্যাঁ, কেউ বুঝতে পারে নি। জানবে কি করে?
- যদি বুঝে যায়?
- বুঝলে বুঝবে, আমি আমার ঠাম্মা’কে ভোট দিয়েছি, বেশ করেছি।

ঠাম্মা আর নাতনি, এ ছাড়া আর কেউ জানে না।
এবারের মত ভোটটা রাই ঠাম্মাকে, থুড়ি দাদু-ঠাম্মার পছন্দের পার্টিকেই দিয়েছে। পরের বার না হয় নিজের পছন্দের প্রার্থীকে দেওয়া যাবে। এ ছাড়া এমনিতেই এবার ও 'নোটা' কে ভোট দিত, সুতরাং ক্ষতি-বৃদ্ধি কিসসু হওয় নি।

কুসুম রায় যদিও এখনও ঠিক কনভিন্সড্‌ হতে পারেন নি। রিক্সার দুলুনির মধ্যেই অনেকক্ষণ চোখ বুজে বসে রইলেন। তারপর?

অর্ধ-শতাব্দী বাদে, কুসুম রায়ের মুখে থেকে স্বগতোক্তি বেরোল, আচ্ছা ...... এটাকেই কি রিগিং বলে?

কথাটা বলেই কুসুম রায় স্ট্যান্ডস্টিল খেলার মত স্থির হয়ে গেলেন। নাতনী-ঠাম্মা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে, কারোর চোখে পলক পড়ছে না।

শুধু ইতিহাসের মুখে দুষ্টু হাসি।

13 comments:

  1. Replies
    1. নাগ, এই লেখাটা মনে হচ্ছে ভোটের বাজারে চূড়ান্ত ফ্লপ করল ... কোই বাত নেহি, অগলি বার জয় সরকার :)

      Delete
  2. বেশ লাগলো। :)

    তবে একটা কথাঃ শ্রীনিতার বাবার নাম বিমল না সুনীল, সেটা একটু ঠিক করে নিতে হবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ অরিজিত, চোখ এড়িয়ে গেস্‌লো। ঠিক করে দিলাম, এতো খুঁটিয়ে সবাই পড়ে না, ভালো লাগলো।

      Delete
  3. Besh bhalo hoeche. Chalie jao!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. কৌশিক, দেশে তো ছিলি না। ভোট নিয়ে জনতা প্রচুর খিল্লি করেছে এবার।

      Delete
  4. সুন্দর লিখেছো। ভাল লাগল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থেঙ্কু ভেতো বাঙ্গালী। আপনি খুব একটা ভেতো বলে মনে হচ্ছে না কিন্তু। অবশ্য বাঙ্গালী ইন জেনারেল ভীতু কিনা সেটা অন্য ডিবেট।

      Delete
  5. Replies
    1. রাই ও ঠাম্মার পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ। স্বাগত।

      Delete
  6. besh bhalo tobe naam palte gelo golpe prothome rai chilo tarpor ria :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভাই তপোজ্যতি, এই যে আপনি এত মন দিয়ে আমার লেখার ভুল ধরেছেন, অর্থাৎ আমার লেখাটা যথেষ্ট মন দিয়ে পড়েছেন - এটা দেখেই মন ভরে গেল। ছোটবেলায় স্কুলে স্যারেরা যখন অত মন দিয়ে পড়তেন, তখন ভালো লাগত না খুঁটিয়ে পড়া, এখন স্রেফ এটা পাওয়ার জন্যই লালায়িত হয়ে বসে থাকি।

      গপ্পের সব জায়গায় 'রাই' করে দিচ্ছি।

      Delete
    2. সরি, তপোজ্যোতি হবে।

      Delete