Friday, September 13, 2013

আমার নিশীথ রাতের বাদলধারা

"মেয়েদের একটা স্বভাব হচ্ছে, একবার কোনো কারণে যদি তারা মুগ্ধ হয়ে যায় তাহলে তারা মুগ্ধ হতেই থাকে। এখন আমি যদি এই মহিলার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করি, তিনি সেই আচরণেরও সুন্দর ব্যাখ্যা বের করবেন এবং আবারো মুগ্ধ হবেন। 

ছেলেদের ভেতর এই আচরণ দেখা যায় না। তারা মুগ্ধ হতে চায় না।
কোনো কারণে মুগ্ধ হয়ে গেলে প্রাণপণ চেষ্টা করে মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠতে।"

(আজ হিমুর বিয়ে)
হুমায়ূন আহমেদ
--

(১)
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ। সেদিনে ক্যান্টিনে জোর আলোচনার বিষয় প্রেম করতে গেলে মিল না অমিল কোনটা বেশী জরুরী। ওই দু'টোই তো মত।
একদলের বক্তব্য ওই "অপোজিটস্‌ অ্যাট্রাক্ট" ব্যাপারটা নাকি বেশীদিন স্থায়ী হয় না। কোথাও গিয়ে বেসিক ব্যাপারগুলো না মিললে সারা জীবন এক সাথে থাকবে কি করে? আরেকদলের বক্তব্য, না ভাই, আমার যা দোষ-গুণ আছে তা আছে, পার্টনারের মধ্যে যদি আর অন্য কিছু খুঁজে না পাই, তাহলে মনটা টানবে কি করে? বোরিং হয়ে যাবে একদম।

তনয়া ক্যান্টিনে ঢুকতেই সবাই চেপে ধরলো। তনয়া-সূর্য কনফার্মড্‌ রিলেশন। এরকম কারোর কাছে ওপিনিয়ন নেওয়া মানে রাইটার্সের ছাপ পড়ে যাওয়া। 
তনয়া খানিক শুনল, তারপর ভুরু বেঁকিয়ে মুখ খুলল, "তোদের একদম কাজ নেই, না রে?" তারপর গটগট করে চা নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গেল। এসব আলোচনা তার খুব একটা ভালো লাগে না। 
এ সব তো গোপন, একান্ত নিজের ব্যাপার, এ নিয়ে আলোচনার কি আছে।
ফালতু।

তনয়া একরোখা মেয়ে, যারা তাকে ভালো করে জানে, তারা জানে, ভীষণ জেদী একটা মেয়ে, বরাবর নিজের ডিসিশন নিজেই নিয়ে থাকে। কলেজ বাছাই করতেও তাই, প্রেমেও তাই। ঠিক যেদিন এইচ এসের রেজাল্টের পরে তন্ময় এসে দুম করে বলল, "এই তোর সাথে প্রেম করে পোষাচ্ছে না। বেসিক্যালি এই সম্পর্কটা টেনে নিয়ে যেতে আমার আর ভালো লাগছে না। চ, দুজনে আলাদা হয়ে যাই।" তনয়া কষ্ট পেয়েছিল ঠিকই, শার্প পেন। কিন্তু এক কথায় সম্পর্কটা ঝেড়েও ফেলেছিল। এটা অবশ্য হোস্টেলের কেউ জানে না। স্কুলের প্রেম তো। মালতী জানে। তন্ময়ের ব্যাপারটা শুনে বলেছিল, "নাহ্‌ তোর সাহস আছে মানতেই হচ্ছে, ঘোড়ার মত জীবন ছোটাচ্ছিস। তনু আমার তেজী ঘোড়া ... ওরফে তেঘড়িয়া :-)"

তাকে সব চেয়ে ভালো বোঝে মালতী। এই আধা-ভীরু মেয়েটি কি করে জানি তনয়ার সব চেয়ে কাছের বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বন্ধুত্বে কোনো প্রিটেনশন নেই। তনয়া ডমিনেটিং, মালতী ডমিনেটেড। এবং দুজনেই সেটা সুন্দর মেনে নিয়েছে। মাধ্যমিকের পরে যখন মালতী স্কুল পছন্দ করতে হাবুডুবু খাচ্ছে, তনয়া পরিষ্কার করে বলে দিল, "এই মলু, দ্যাখ তুই কিন্তু রাধারানী গার্লসেই অ্যাডমিশন নিবি। ওদের সায়েন্স ডিপার্টমেন্টটা খুব ভালো। পরপর দুবার নশোর ওপরে নাম্বার উঠেছে। ম্যাডামরা পড়ায়ও ভালো, আর খাতাও মনে হয় ভালো জায়গায় পড়ে। বাব্বাঃ, এক একজন স্ট্যাট্‌সে কি হাইফাই স্কোর করেছে। বায়োতে অবশ্য অতটা নাম্বার ওঠে নি।"

তারপর তিন বছর কেটে গেছে। বারো পেরিয়ে, জয়েন্ট পেরিয়ে, সূর্য আর তনয়া দুজনেই বর্ধমান মেডিল্যাল কলেজের স্টুডেন্ট। একসাথে একই কোচিং এর নোট মুখস্ত করার ফল বোধহয়। জয়েন্টে র‍্যাঙ্কটাও কাছাকাছি হয়েছিল। 
মালতীর ভালো র‍্যাঙ্ক আসে নি, ও যাদবপুরে অঙ্ক নিয়ে অনার্স পড়ছে।

সেদিন সূর্য আর তনয়া যাদবপুরে গেল। মালতীর সাথে দেখা করতে। তিন বন্ধুতে অ্যাদ্দিন বাদে মুখোমুখি দেখা। মালতী ওদের সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ক্যান্টিনে নিয়ে গেল। কত গল্প পেন্ডিং পড়ে আছে। নতুন কলেজ, নতুন ক্লাসমেট। ক্লাসের কোন ছেলেগুলো মালতীকে আড়চোখে দেখছে। ছেলেগুলোর মধ্যে কি কেউ আদৌ পাতে দেওয়ার যোগ্য? 
চা-টোস্ট খাওয়ার পরেই সূর্যটা ছটফট্‌ করতে করতে সিগারেট কিনতে ছুটল। তনয়া মনে মনে এটাই চাইছিল, মালতীর সাথে কিছু একা সময় দরকার। মেয়েলী পি এন পি সি গুলো ঝালিয়ে নিতে হবে। নিষিদ্ধ আনন্দের মজা আছে ওতে। ক্লাস টুয়েলভে পড়তে ওরা এই পি এন পি সি সেশনটার নাম দিয়েছিল - "কফি উইথ তনু-মলু।"

কিন্তু তনু-মলুর পি এন পি সি এবার ঠিক জমল না। সূর্য কেটে পড়তেই মালতী হঠাৎ করে বলে উঠল, "এই যে তেজী ঘোড়া, একটু চেপে খ্যালো। আমার কেমন জানি লাগছে। সিক্সথ্‌ সেন্স সিগন্যাল দিচ্ছে। পাখি কিন্তু অন্য ডালে ঘুরে বেড়াচ্ছে।" তনয়া প্রথমে এক লহমার জন্যে থমকে গেল, তারপর খুব এক চোট হাসল। মালতীকে ঠেলা মেরে বলল, "নিজের চরকায় তেল দে ব্যাটা।"
সূর্যকে সিগারেট কিনে ফিরে এলেই এটা বলতে হবে। দুজনে মিলে আরেকপ্রস্থ হাসাহাসি করা যাবে। পাগল না পেটখারাপ? সূর্যকে বুঝতে তার কোনো ভুল হতেই পারে না। পাক্কা দেড় বছরের রিলেশন। এই তো আজকেও কথা হল, প্রোজেক্টের কাজে সূর্য এইম্‌স্‌ যাবে। সামনের সপ্তাহে ফিরবে। রাজধানীর টিকেটটাও তনয়ার অ্যাকাউন্ট থেকেই কাটা হল। আই আর সি টি সির কোনো ঠিক নেই, এক এক সময় এক এক জনের লগ ইনে খোলে। পাগল ছাগলের কারবার।
মালতীটাও পাগলে গেছে।

সেদিন ক্যান্টিনে ঘটনা ঘটেছে। বারণ করা সত্ত্বেও সূর্য জোর করে চুমু খেয়েছে। ঘটনা যে এদিকে গড়াবে তনয়া বুঝতে পারে নি প্রথমে। 
তনয়ার মাঝে মধ্যে চা পায়। রাত আট'টা নাগাদ দুজনেরই চা পেয়েছিল, কিন্তু নিজেদের বানিয়ে খাওয়ার এনার্জি ছিল না। এই সব সিচুয়েশনে খোকনদার ক্যান্টিনই একমাত্র ভরসা। 
চা খেতে খেতে দুজনে গল্প করছিল। সারা ক্যান্টিন ফাঁকা, খোকনদাও চেতাব্‌নি দিয়ে গেছে, এটাই শেষ চা, এরপর আর হবে না। তারপর অবশ্য এইচ ও ডি র ফোন এল, আর খোকনদা বিড়বিড় করতে করতে চারটে চায়ের কাপ নিয়ে স্টাফ বিল্ডিং এর দিকে হাঁটা দিল।

সূর্য'র ডান ভুরুর মাঝখানে একটা চেরা দাগ আছে, তনয়া শুধু একটা কমপ্লিমেন্ট দিয়েছিল, "ইট লুকস্‌ সেক্সি"। 
তারপর হঠাৎ করেই ইম্পালসিভ রি-অ্যাকশন। তনয়া প্রথমে চমকে গেলেও আসলে ভালোই লেগেছে। সত্যি বলতে একটু প্রশ্রয়ই দিয়েছে সূর্যকে।
মালতী অবশ্য ঘটনা শুনে একটু খুঁত খুঁত করছিল, "হুঁ, ভারি তো একটা কাটা দাগ, তার জন্য এই।"
তনয়া ঝাঁপিয়ে পড়ল, "আহা কি মুশকিল, সকলের টার্ন-অন তো একই রকম হবে না। আমার ওটা ভালো লাগে। তোর অন্য কিছু ভালো লাগে। প্রেমের তো কোনো ধরা-বাঁধা কারণ হয় না। If you press me to tell why I love him, I feel this cannot be expressed, except by answering: because it was he, because it was I."

মালতী ঝাঁঝিয়ে উঠল, "বাব্বাঃ একেবারে ফ্রেঞ্চ রেনেসাঁর কোটেশন। আমার ভাই সোজা কথা - তোর এই সব সময় সূর্য সূর্য ভালো লাগে না বাপু। প্রেম করছিস বেশ করছিস, কিন্তু আর কটা দিন যেতে দে, এরকম আগল না রেখে নিজেকে বিলিয়ে দিস না।" 
তনয়া উত্তর দিয়েছিল, "প্রেম যদি করতেই হয়, তাহলে পুরো মন দিয়েই করা উচিত, তাই নয় কি? বিলিয়ে না দিলে মনটা দেব কি করে?"

মালতী আর সূর্য তো এখনো জানেই না, তনয়া সূর্যর জন্য একটা সুন্দর একরঙা উলের মাফলার কিনে রেখেছে। ডিসেম্বর পড়ে গেছে, ঠাণ্ডাও পড়েছে বটে মফস্বল শহরটায়। জমিয়ে একদম। সূর্য দিল্লী থেকে ফিরলে, এই মাফলারটা দেবে।
উফ্‌, যা মানাবে না।
গত মাসে সূর্য ওদের বাড়ি নিয়ে গেছিল, কাকীমা টিপিক্যাল নরম স্বভাবের মানুষ। বারবার বলছিলেন, একটাও মাফলার না নিয়ে ছেলেটা হোস্টেলে চলে যায়।
 
তনয়া কমিটেড। সে নিজের বাড়িতেও হাল্কা আভাস দিয়ে রেখেছে। এম বি বি এস টা হয়ে গেলে ইন্টার্নশিপ শুরু হবে। তখনই সই-সাবুদের ঝামেলাটা মিটিয়ে ফেলতে হবে।

(২)
অনেক বলে কয়েও বইয়ের দোকানদারটাকে রাজী করাতে পারল না তনয়া। হ্যারিসনের প্রিন্সিপল অফ ইন্টারনাল মেডিসিন, এইট্টিনথ্‌ এডিশন। বইটা কিনতে হবে। প্রোফেসর রায়ের ক্লাসটা নইলে কিছুতেই ফলো করা যাচ্ছে না। মুশকিল হচ্ছে লাইব্রেরীতে তিনটে কপি ছিল, সবকটাই জনতা তুলে নিয়েছে। প্লাস এই বইটা একটা অ্যাসেট, পরেও লাগবে। কিনে নেওয়াই ভালো।
সূর্য থাকলে কি সুবিধেটাই না হত। ওই কিনে এনে দিত কলকাতা থেকে। কিন্তু সামনে ক্লাস টেস্ট, কাজটা ফেলে রাখা ঠিক হবে না। তনয়া মনে মনে ঠিক করে নিল, এই শনিবারই কলেজ স্ট্রীট যাবে সে। এক কপি কিনলেই হবে। দু'জনে একটা বই থেকেই পড়বে। ভালোই হবে। সূর্য সোমবার দিল্লী থেকে ফিরবে, বাই দ্যাট টাইম তনয়া কিছুটা নোট্‌স তৈরী করে ফেলতে পারবে।
যেমন ভাবা তেমনি কাজ, সকালের সুপারটা ধরে সো-ও-জা শিয়ালদা। তারপর হেঁটে হেঁটে কলেজ স্ট্রীট। রাস্তায় বিয়ের কার্ডের সারি সারি দোকান। পশ্চিমবঙ্গে লোকে কি হারে বিয়ে করছে বোঝার জন্য এই রাস্তাটায় আসতে হয়।
আরেকটু এগিয়ে ট্রাফিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ট্রাম পেয়ে গেল তনয়া।

ওই যে ছেলেটা কলেজ স্ট্রীটের মুখটাতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে, অনেকটা সূর্যর মত হাইট। ব্ল্যাক টি শার্ট আর ফেডেড জীন্স্‌, মানিয়েছে ভালো। পেছন থেকে দেখা যাচ্ছে, পাশে সবুজ সালোয়ার পড়া একটা মেয়ে, কি সুন্দর আইসক্রিম খেতে খেতে গল্প করছে। মিষ্টি প্রেম, দেখতেও ভালো লাগে। সূর্য ফিরে আসুক, ওরাও এভাবে কলেজ স্ট্রীটে ঘুরবে একদিন। প্যারামাউন্টের শরবত খাবে। কফি হাউসে ঢুকবে, কিন্তু বেশীক্ষণ বসবে না, বড্ড ভীড়। ট্রামের সেকেন্ড ক্লাসের জানালা থেকে খুব মন দিয়ে ছেলে মেয়ে দুটিকে দেখতে থাকলো তনয়া। 
সত্যিই সূর্য আসুক এবার, অনেক দিন একসাথে কলকাতা আসা হয় নি। অ্যাকাডেমীতে নাটক দেখবে, তার আগে প্রিন্সেপঘাট থেকে ফার্স্ট ক্লাসে চড়া যাবে একসাথে। ফার্স্ট ক্লাসের ওই একটাই কারণ, ভীড় কম। ছেলেটি আইসক্রিমের কোনটা একবার মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিল। ওর হাত থেকেই মেয়েটি খেয়ে নিল। মেয়েটির হাত তো ফাঁকা নেই, দুজনে হাত ধরে হাঁটছে। হাত ছাড়তেই চাইছে না।
ভারী সুন্দর মানিয়েছে কিন্তু।

ট্রাম মোড়ে গিয়ে বাঁক নিতেই কি মনে হল, ঘুরে আর একবার দেখল তনয়া। এবার ছেলে মেয়ে দুটোর মুখ দেখা যাচ্ছে।
ওটা সূর্যই।
সাথে বি সেকশনের স্বাতী। কলকাতার মেয়ে।

শিঁরদাড়া বরাবর কেউ যেন বরফ বুলিয়ে দিল।

হ্যান্ডব্যাগের মধ্যে মোবাইলটা খুঁজে পাচ্ছে না কেন? ওই তো। কোনোরকমে কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইলটা নিয়ে নাম্বারটা খুঁজতে গিয়ে হাত থেকে পড়েই গেল। নিচু হয়ে কুড়িয়ে নিয়ে তনয়া কল করল।
সূর্যর প্রত্যয়ী কন্ঠ ভেসে এল, "কি রে কেমন আছিস? শরীর কেমন?"
- "আমি ভালো ... ভালোই আছি রে সূর্য। তুই ... তুই কোথায়?"
- "এই তো। কালকেই বর্ধমান ফিরবো ... এই শোন না ... এখন একটু রাস্তায় আছি, সিগন্যাল ভালো না। গিয়ে কথা বলছি। রাখি তাহলে?"

তনয়া এবার কি করবে?
কি করবে? কি করবে?

সূর্যকে চ্যালেঞ্জ করবে? কেন তুই স্বাতীর সাথে ঘুরছিলি?
না না না। কিছুতেই না। সূর্য নিজে থেকে এরকম করতেই পারে না। স্বাতী ফার্স্ট ইয়ারে একবার প্রোপোজ করেছিল সূর্যকে। এবারও নিশ্চয়ই স্বাতী জোর করেছিল, তাই বাধ্য হয়ে সূর্য ...... নিশ্চয়ই তাই।

তাই যেন হয়। তাই যেন হয়।
 
সত্যিই তাই। সূর্য প্রথমে কিছু বলে নি। হোস্টেলে ফিরে আসার পথে তনয়া একটু হিন্ট দিতেই বুঝে ফেলল।
প্রথমেই ওই কথাটা বলল।
সূর্য আসলে একদমই চায় নি। স্বাতীটা এমন জোর করল, তারপর আবার সূর্যকে স্বাতীদের বাড়িতেও যেতে হল। 

যাক্‌ বাবা, সব ছেলে তাহলে একরকম নয়। নিজে থেকেই বলল তো। অন্য কেউ হলে তো স্বীকারই করত না।
সূর্য একদম আলাদা। একদম।

দুদিন পর এসবের হ্যাং ওভার কাটিয়ে মালতীকে বলতেই, মালতী প্রথমে চুপ মেরে গেল। তারপর ফিসফিস করে বলল, "কিন্তু এই মেয়েটিই সূর্যর প্রতি অ্যাট্রাক্টেড ছিল না? সব জেনে শুনেও সূর্য ঘুরতে চলে গেল? তাও যদি তোকে আগে জানিয়ে যেত।"
মালতী ছাড়া অন্য কেউ হলে তনয়া দু'কথা শুনিয়ে দিত নিশ্চয়ই। কিন্তু এখন তনয়ার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। হাত পা ছেড়ে দিয়েছে।

কিন্তু মালতীর করছে, "তুই তো দেখি প্রতিটি কাজ সূর্যকে বলে করিস। কোথাও একটা ফাঁক হয়ে যাচ্ছে না তো রে তনু? জোর করে মেলাতে চাইছিস না তো?"
মালতী বলেই যাচ্ছে, "স্বাতী যদি কোনোদিন অন্য কিছু জোর করে? স্বাতীরও যদি সূর্যর ভ্রুর কাটা দাগটা ভালো লাগে, তাহলে?"
তনয়া চুপ। কথা খুঁজে পাচ্ছে না, হাতড়াচ্ছে, "কিন্তু ... মানে ... সূর্য তো মিথ্যে বলে নি, স্বাতী হয়তো সত্যিই জোর করেছিল।"

মালতী অনেকক্ষণ কোনো কথা বলল না।
তারপর খুব থেমে থেমে, কেটে কেটে বলল, "তোর সাহসের ঘোড়াগুলো এরকম দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে কেন রে তনু? অনেক ছুটেও তো আর ঘোড়াগুলোকে ধরতে পারবি না।"
--
সত্যজিতের চোখে রবীন্দ্রনাথ

ওগো অন্ধকারের অন্তরধন,
দাও ঢেকে মোর পরান মন-
আমি চাই নে তপন, চাই নে তারা ।।

একলা ঘরে চুপে চুপে
এসো কেবল সুরের রূপে-
দিয়ো গো, দিয়ো গো,
আমার চোখের জলের দিয়ো সাড়া ।।

--



17 comments:

  1. এইটা ভালো হয়েছে।অনেক পুরানো স্মৃতি উসকে দিলো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. স্মৃতি মাঝে মধ্যে মনে না পড়লে কি সমস্যা হত বল দিকিনি:)

      Delete
  2. লেখাটা সত্যিই খুব ভালো হয়েছে .. কিন্তু শেষটা না জানতে পারার কারণে কিরকম একটা অম্বল ঢেঁকুর উঠছে .. লেখাটা কি আরেকটু বাড়ানো যায়? অনুরোধ রইলো

    ReplyDelete
    Replies
    1. সৌম্য, স্বাগতম! আরেকটু সময় পেলে নিশ্চয়ই বাড়ানো যেত লেখাটা, কিন্তু আপাতত এরকমই চলুক না।

      এ গল্পের শেষটা আসলে প্রথমেই লেখা আছে। হুমায়ূন আহমেদের জবানীতে। ওঁর মত কলমের জোর নেই বলেই ওই সামান্য কথা কটা বলার জন্য অ্যাত্তোটা লিখতে হল!

      Delete
  3. lekhata sundor hochche.... kintu eta ki sesh? naki aro baki ache..? mone hochhe hotat sesh hoye gelo, tai aro continue hole valo hoy --- Meghla

    ReplyDelete
    Replies
    1. মুশকিলে ফেললি তো :)
      এ তো বুঝে নেওয়ার গল্প, যে যে ভাবে বুঝতে চায়। লেখক পাঠকের ওপরে বাকিটা ছেড়ে দিয়েছে।

      Delete
  4. tobu sobar surjo kei chai

    Prem shudhu ek mombati

    ReplyDelete
  5. Fatiye laglo lekhata odvut sabolilota aache. ai vabe sesh holo bolai bodhoy charm ta r o beshi lagche...

    Minakshi Basu Roy

    ReplyDelete
  6. আমার শেষটা দুর্দান্ত লেগেছে, এর পরে কিছু লেখা যেতেই পারতো, কিন্তু তাতে ঝট্‌কাটা থাকতো না। দারুণ। :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. অরিজিত, আপনি পুরনো লেখাটা ঝেড়ে-ঝুড়ে বার করেছেন দেখে বেজায় ফূর্তি পেলাম। আর এই লেখাটার ধরণ নিয়ে প্রথম থেকেই দেখছি নানা মুনির নানা মত।

      Delete