ইনফোসিস, ৩০০ জনকে রিক্রুট করে ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি ভরিয়ে দিয়েছে। এমনিতে প্রাণহীন দেওয়ালের গায়ে ঝিমুনি ধরানো হলুদ আলোতে এই লিস্টি সেঁটে থাকার কথা। ফাইনাল লেভেল ইন্টারভিউ যারা দিয়েছিল, তারা দুরু দুরু বুকে দেখতে থাকবে শিকে ছিঁড়ল কিনা।
কিন্তু এবারে রেকর্ড ৫৫০ জন শর্টলিস্টেড। তারপর ফাইনাল ইন্টারভিউ, আর তার থেকে অফার শেষমেশ মোট ৩০০ জন। এ বিশাল বড়ো লিস্ট। এই লিস্টি টাঙ্গিয়ে রাখলে ঝাড়া তিন ঘণ্টা লেগে যাবে সবার নাম জানতে। আর যদি ধাক্কাধাক্কি'তে লিস্ট ছিঁড়ে যায় তাহলে আবার দৌড়োও প্লেসমেন্ট অফিসে। আবার প্রিন্ট আউট নাও। তাতে প্লেসমেন্ট অফিসারের সই নাও, স্ট্যাম্প মারো। সে অনেক হ্যাপা।
তাই ঠিক হয়েছে, সুজয় লিস্ট ধরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে নামগুলো পড়ে যাবে। ছেলের বাঁঝখাঁই গলা। আর এক বারে শুনতে না পেলে, জনতা এমনিই আওয়াজ দেবে, তখন আবার পড়া হবে। কোই পরোয়া নেই। ভালো খবর দু'বার শুনলে ক্ষতি নেই।
সুজয় পড়তে শুরু করল। চার দিক থেকে বিভিন্ন রকম অনুভূতি।
ই-ই-য়ে-স, গুরু আজকে কিন্তু স্কচ, চাকরীটা লেগে গেছে পারমিতা - এসব থেকে শুরু করে - ও মাই গড, আই কান্ট ফাকিং বিলিভ ইট, ফ্রিকিং অ'সাম, ল্যান্ডেড দ্য জব বেবি।
সুজয়ের বেশ ভালোই লাগছে। তার চাকরি আগেই হয়ে গেছে। বাজার বেশ ভালো যাচ্ছে। থার্ড ইয়ারেই চাকরি - মুখের কথা?
লিস্ট অ্যালফেবিক্যাল অর্ডারে সাজানো। 'স' দিয়েই মোটামুটি অর্ধেক নাম। বাকি নামের মধ্যে সিক্সটি পার্সেন্ট আবার 'অ' দিয়ে। সুজয় পড়ে যাচ্ছে।
সুমন্ত সাহা। সু-ম-ন্ত সা-হা। সুমন্ত সাহা, কই?
রোগা পাতলা মফঃস্বলের ছেলে ভিড় ঠেলে এগিয়ে এল। দাদা আমি । আমিই সুমন্ত, সুমন্ত সাহা। একটু দ্যাখো না, ডিপার্টমেন্ট'টা সিভিল তো? পেছন থেকে আওয়াজ উঠলো
- ক্যানো বে ? ভি আই পি নাকি?
- না, মানে আরেকজন সুমন্ত সাহা আছে মেকানিক্যালে।
সুজয় ভালো করে দেখে নিল। হ্যাঁ, দু'জন সুমন্ত'ই আছে লিস্টে। বাঁচা গেল। কারোর মুখের ওপর দুঃসংবাদ'টা দিতে হবে না।
সাগ্নিক, সাগ্নিক রয়। ভিড়ের পেছন থেকে হো হো গোছের এক আওয়াজ উঠলো। গোটা দশেক ছেলে একটি লাল টি-শার্ট পড়া ছেলেকে কাঁধে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। দেখে যা বোঝা যাচ্ছে, রেস্টোর্যান্টের ভিতরে গিয়েই নামানো হবে।
পরের নাম ... পরের নাম ... সাদ্দাম।
সাদ্দাম হুসেন। সুজয় আরেকবার পড়ে নিল নামটা। হ্যাঁ, সাদ্দাম হুসেন'ই। সা-দ্দা-ম হু-সে-ন, সাদ্দাম হুসেন কে আছিস?
লিস্ট অ্যালফেবিক্যাল অর্ডারে সাজানো। 'স' দিয়েই মোটামুটি অর্ধেক নাম। বাকি নামের মধ্যে সিক্সটি পার্সেন্ট আবার 'অ' দিয়ে। সুজয় পড়ে যাচ্ছে।
সুমন্ত সাহা। সু-ম-ন্ত সা-হা। সুমন্ত সাহা, কই?
রোগা পাতলা মফঃস্বলের ছেলে ভিড় ঠেলে এগিয়ে এল। দাদা আমি । আমিই সুমন্ত, সুমন্ত সাহা। একটু দ্যাখো না, ডিপার্টমেন্ট'টা সিভিল তো? পেছন থেকে আওয়াজ উঠলো
- ক্যানো বে ? ভি আই পি নাকি?
- না, মানে আরেকজন সুমন্ত সাহা আছে মেকানিক্যালে।
সুজয় ভালো করে দেখে নিল। হ্যাঁ, দু'জন সুমন্ত'ই আছে লিস্টে। বাঁচা গেল। কারোর মুখের ওপর দুঃসংবাদ'টা দিতে হবে না।
সাগ্নিক, সাগ্নিক রয়। ভিড়ের পেছন থেকে হো হো গোছের এক আওয়াজ উঠলো। গোটা দশেক ছেলে একটি লাল টি-শার্ট পড়া ছেলেকে কাঁধে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। দেখে যা বোঝা যাচ্ছে, রেস্টোর্যান্টের ভিতরে গিয়েই নামানো হবে।
পরের নাম ... পরের নাম ... সাদ্দাম।
সাদ্দাম হুসেন। সুজয় আরেকবার পড়ে নিল নামটা। হ্যাঁ, সাদ্দাম হুসেন'ই। সা-দ্দা-ম হু-সে-ন, সাদ্দাম হুসেন কে আছিস?
![]() |
http://tinyurl.com/q7kgdu4 |
কুড়ি বছরের ছেলেটি, জন্ম ১৯৮২ তে। ১৯৭৯'তে সাদ্দাম প্রেসিডেন্ট হওয়ার সাথে সাথে বাবা ঠিক করে রেখেছিলেন, প্রথম সন্তান ছেলে হলে নাম রাখবেন সাদ্দাম। মুসলিম উন্নতির মুখ সাদ্দাম। একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ত করার নাম সাদ্দাম।
১৯৮২'তে নিশ্চয় বাবাজানের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়েছিল। মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রামের রেডিও'তে সংবাদ পাঠক প্রতিদিন ব্যারিটোন কন্ঠস্বরে জানান দিচ্ছেন, ইরাক-ইরান যুদ্ধে, সাদ্দামের সুযোগ্য নেতৃত্বে ইরাক বাহিনী কিরকম বীরদর্পে এগিয়ে চলেছে।
সাদ্দাম পায়ে পায়ে এগিয়ে এল। সদ্য চাকরি পাওয়ার আনন্দে মুখ উজ্জ্বল। সাদা মুক্তোর মত দাঁতের সারি দেখা যাচ্ছে।
জটলার মধ্যে থেকে আওয়াজ উঠলো।
- সে কি রে, বাবা কি নাম দিয়েছে র্যা? একে সাদ্দাম তায় হুসেন।
- অনসাইট ফনসাইট ভুলে যা, দেশের বাইরে জন্মের মত বেরোতে পারবি না। সেই নার্সারি থেকে শুরু, নো ভিসা গুরু।
- ধুস্ দেশের বাইরে। ল্যাংটার আবার বুক পকেট। বোম্বেতে গেলেই মেরে তক্তা বানিয়ে দেবে। তার আবার ভিসা?
সাদ্দাম হুসেন থমকে দাঁড়ালো।
একশো ওয়াটের বাল্ব, ফিউজ কেটে যাওয়ার আগের মুহূর্তে কিরকম ফস্ করে জ্বলে ওঠে, তারপর ঝুপ করে নিভে যায়।
সাদ্দাম পায়ে পায়ে এগিয়ে এল। সদ্য চাকরি পাওয়ার আনন্দে মুখ উজ্জ্বল। সাদা মুক্তোর মত দাঁতের সারি দেখা যাচ্ছে।
জটলার মধ্যে থেকে আওয়াজ উঠলো।
- সে কি রে, বাবা কি নাম দিয়েছে র্যা? একে সাদ্দাম তায় হুসেন।
- অনসাইট ফনসাইট ভুলে যা, দেশের বাইরে জন্মের মত বেরোতে পারবি না। সেই নার্সারি থেকে শুরু, নো ভিসা গুরু।
- ধুস্ দেশের বাইরে। ল্যাংটার আবার বুক পকেট। বোম্বেতে গেলেই মেরে তক্তা বানিয়ে দেবে। তার আবার ভিসা?
সাদ্দাম হুসেন থমকে দাঁড়ালো।
একশো ওয়াটের বাল্ব, ফিউজ কেটে যাওয়ার আগের মুহূর্তে কিরকম ফস্ করে জ্বলে ওঠে, তারপর ঝুপ করে নিভে যায়।
দেখেছেন কখনো?
--
--
অসাধারণ রকমের মর্মস্পর্শী, অথচ বাস্তব…
ReplyDeleteHya ..
Deleteদারুন হয়েছে !
ReplyDelete:)
Deletebah.. khuub bhalo.....:)
ReplyDeleteTor moto kichhu pathok achhe bole blog ta cholchhe ..
Deleteaha..durdanto suru....ekta choto golper.....
ReplyDeleteSwagatam sekhar
DeleteKhub bhalo.tabe choto gappe ro beshirakham natokiyata thake.asaste nischoy asbe.tabe amar kache bharaman kahanigulo aneeeeeeeeek beshi attractive
ReplyDeleteগুড, তাহলে ভ্রমণ কাহিনী আরো লিখব।
Deletebharaman kahinigulo khub sundarr hai.ekebare chak bhanga.natun.eman ta baro ekta porte pai na.beshs satyajit roy marka ekta intu intu byar thake.tai amar bhalo lage.kintu ei gappe cheletar naam janar porei ki hote choleche ta dhorte perechilam....tai...
ReplyDeleteপ্রেডিক্টেব্ল হয়ে গেলে গপ্পের মজা থাকে না, ঠিক ই ...
Deleteদারুণ! খুব ভাল লাগলো :)
ReplyDeleteধন্যবাদ অরিজিত :)
Deleteফিল টা খুব চমত্কার captured হযেছে !
ReplyDelete:)
Deleteখুব সুন্দর হয়েছে। শেষর উপমাটা দারুন।
ReplyDeleteচুপকথায় স্বাগত তথাগত।
Deletebere hoyechhe... khub bhalo laaglo. kuntal r site theke elam. tomar mkting campaign kaaj korechhe, setao janiye diye gelam. :)
ReplyDeleteebar kuntaladi marbe amay :-)
Delete