Sunday, February 17, 2019

না-মুমকিন (২)

(দু'একজন জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন বই থেকে ঝেড়ে লিখছি। সেটা আপাতত উহ্য থাক। গুরু তারাপদ রায় শিখিয়েছেন, মন্ত্রগুপ্তি কাউকে শেখাতে নেই। এখন আপাতত শুধু সেই বইয়ের উৎসর্গ বলে দেওয়া যাক। লেখকের সাত বছরের ছেলে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখে বাবাকে বলেছিল, বাবা আমি আর চার বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেট খেলতে চাই। বাচ্চা ছেলে আবেগ চেপে রাখতে পারে নি। বাবার জবাব ছিল, উচ্চাকাঙ্খা যদি করতেই হয়, সেটা সুউচ্চ হওয়াই কাঙ্খিত। মনে রেখ, ডব্লিউ জি গ্রেস নয় বছর বয়েসে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক করেছিলেন।)

অবশেষে মাইক সিমন্স কোম্পানির চাকরিটা হয়ে গেল। আপাতত খাওয়াদাওয়ার চিন্তা নেই। টেস্ট শেষ হলে বাড়ি ফিরে যাবার ট্রেনের ভাড়া তো বোর্ড দেবে। বলা যায় না, অ্যাসেজের শেষে হাতে কিছু জমতেও পারে। একটু স্বস্তি পাওয়া গেল। এই কদিন আগে অব্দি সে টেস্ট খেলার যোগ্য কিনা তাই নিয়ে ক্রিকেটপ্রবর সাংবাদিকেরা নাক সিঁটকাচ্ছিলেন। নট ব্যাড।

কি চরম নাটকীয় মোচড়ে বিধাতা এই ছেলের প্রথম টেস্ট সিরিজের সুর বেঁধে দিয়েছেন।

সিরিজের শুরুতেই তো নিউ সাউথ ওয়েলসের সাথে এমসিসির ম্যাচ। ব্র্যাডম্যান অটোমেটিক চয়েস। তো ছোকরা খারাপ করল না। ওদিকে হ্যামন্ড যে ভালো খেলবে জানাই ছিল, দু ইনিংসে ২২৫। ব্র্যাডম্যান একটু বেশী - ২২৯, গড়ও ওই ২২৯। এই গড় বা অ্যাভারেজ জিনিসটা নিয়ে ব্যাটাচ্ছেলে যেন ছেলেখেলা করছে। সংজ্ঞাই পালটে দেবে মনে হচ্ছে। সেদিন নির্বাচক কমিটির মিটিং এ কথা হচ্ছিল, এত কম বয়েসে দেশের হয়ে খেলবে, এর স্কুল ক্রিকেটের গড়টা একবার দেখে নেওয়া দরকার। পাওয়া গেল না, মানে ক্যালকুলেট করা গেল না। হতচ্ছাড়াকে স্কুল ক্রিকেটে কেউ আউট করতে পারে নি। গড় অসীম।

নির্বাচকরা ঠিক করলেন, ১৬ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়া একাদশ এমসিসি ম্যাচে ব্র্যাডম্যানকে খেলানো হোক – ৩০ নভেম্বর প্রথম টেস্ট শুরু, তার আগে ছোকরাকে একবার ভালো করে দেখে নেওয়ার এই শেষ সুযোগ। এমনিতেই ক্রস ব্যাটে খেলে, লারউডকে কি সে আরেকবার সামলাতে পারবে? অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে যতই গণ্ডা গণ্ডা রান করে থাকুক, বিদেশী অচেনা ফাস্ট বোলার নিয়ম করে সামলাতে আলাদা বুকের খাঁচা দরকার। ছেলেটা মোট ৭৬ করল, ম্যাচের গড় ৭৬, সিরিজের গড় ১৫০ প্লাস।
ফলত প্রথম টেস্টে সিলেকশন এবং সে টেস্টে দু'ইনিংসে গড় ৯। এটা নির্বাচকদের সত্যিই বড় ধাক্কা দিল। আপনিই ভাবুন না, ধরুন ভালো ইলিশের দাম আপনি জানেন হাজার টাকা প্রতি কিলোর নিচে হয় না। হঠাৎ বাজারে গিয়ে দেখলেন পঁয়ষট্টি টাকা কিলো দু কেজির ইলিশ, আপনার চোখে সন্দেহের বাষ্প ঘনিয়ে আসবে না? ব্র্যাডম্যান, যে ছেলে কোনোদিন একশোর নিচে নম্বর পায় না, বড়োজোর নব্বই, সে যেন জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় ব্যাক পেল।

সেকেন্ড টেস্ট ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে গুচ্ছ নাটক। দেশ চাইছে তরুণ ব্র্যাডম্যানকে। এতোটাই চাপ যে নির্বাচক কমিটির প্রধানকে নতুন করে বিজোড় সংখ্যার নির্বাচক কমিটি বানাতে হয়েছে। ছেলেটা তো প্রথম টেস্ট বাদ দিলে বড্ড ভালো খেলছে।
এমনিতেই এবারের ইংল্যান্ড টিম খুব ধারালো। হ্যামন্ড নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্যাটিংকে - পঁচিশ বছর বয়েস। ব্যাটের হাত চমৎকার। আর বোলিং করছে বটে লারউড – সেও পঁচিশ। দু টিম মিলিয়ে দ্রুততম বোলার। দুজনেই কেরিয়ারের শীর্ষে।
তাদেরকে সামলানোর জন্য বুড়োদের ওপর ভরসা রেখে তরুণ ব্র্যাডম্যানকে বলি দিলেন নির্বাচকেরা।

সেকেন্ড টেস্টে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে বিশেষ সুবিধে করতে পারে নি। ইংল্যান্ড বরং নেমে বিপক্ষ বোলারদের বেশ খাটান দিয়েছে। এগারোটার মধ্যে দশটা ব্যাটসম্যানই দু ডিজিটে রান করেছে। আর এক জন, হ্যামন্ড অবশ্য তিন ডিজিটে - ৬০৫ বল খেলে ২৫১ রান। তার ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সেকেন্ড ইনিংসে দুটো সেঞ্চুরি থাকা সত্ত্বেও ফোর্থ ইনিংসে বারো রানের বেশী টার্গেট রাখা যায় নি। ফলশ্রুতি গোহারা হার। এবং পুনর্মুষিক ভব। থার্ড টেস্টে ব্র্যাডম্যান ফেরত।

থার্ড টেস্টে বেশ মজার ব্যাপার হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া ৩৪৭ রানে আট উইকেট, এমন সময় ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল। হতচ্ছাড়া ফেন্ডার পরের দিন লিখেছিল, সারা রাত ধরে এমন বৃষ্টি পড়েছে, মনে হচ্ছিল যেন হোটেলের ছাদে বসে কেউ ইংল্যান্ডের কফিনে পেরেক ঠুকছে।
পরের দিন রাইডার ডিক্লেয়ার না করে খেলা চালিয়ে গেলেন। বৃটিশ ক্যাপ্টেন চ্যাপম্যান স্পেশালিষ্ট বোলারদের হাতে বল তুলে দিলেন। চার রান যোগ করে ৩৫১ তেই অস্ট্রেলিয়ার নটে গাছটি মুড়িয়ে গেল। 
দুই অধিনায়কেরই আসলে স্ট্র্যাটেজি ভুল হয়েছিল। ওই আঢাকা কাদামাখা উইকেটে শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে খেলানোর জাস্ট কোন মানে হয় না। কটা রান আর হবে। তার চেয়ে ডিক্লেয়ার করে বিপক্ষের টপ অর্ডারকে ধসিয়ে দেওয়া অনেক বেশী কাজের। আর কেউ যদি একান্ত খেলিয়ে যায়ই, তাহলে সেক্ষেত্রে তাদের আউট করারও কোন মানে হয় না। শেষ দুই ব্যাটসম্যান খেলছে খেলুক না। উইকেটটা তো শুকাবে।

কাদামাখা শুনে যদি অতিশয়োক্তি মনে হয় - তাহলে শুনুন পরের দিন খবরের কাগজের রিপোর্ট অনুযায়ী ওই দিন প্রথম চার ঘণ্টায় বেশীরভাগ বল পিচে পড়ার পরে থেমে গেছিল। ইট ওয়াজ জাস্ট গেটিং স্টাক – হেন্স দ্য ফ্রেজ স্টিকি উইকেট। কথার কথা নয়, বলটা পিচে জাস্ট আঠার মত আটকে যাচ্ছিল।

No comments:

Post a Comment