৬) ভ্যাটিকান
ভ্যাটিকানে
এন্ট্রি ফ্রি, ধর্ম-উপাসনার জায়গা তো। ব্যবসা’টা এরা ভালোই বোঝে। একটা লিফট
বসিয়েছে টঙে যাওয়ার জন্য, তার ভাড়া হল কিনা দশ ইওরো। ইল্লি, আর কি?
চটপট
সুইস আর্মি দেখে নিয়ে সেন্ট পিটার্সে ঢুকে পড়তে হবে। মাঝে শুধু একবার ভ্যাটিক্যান
পোস্ট’টা দেখে নেওয়া যেতে পারে। ছোটবেলার স্ট্যাম্প কালেকশনের নেশাটা টুপ করে ভেসে
উঠবে, সাত সমুদ্র পেরিয়ে পৃথিবী’র সব চেয়ে ছোটো দেশের যে ছাপ মারা ডাকটিকিট’টা
আপনার সংগ্রহে আঠেরো বছর ধরে লুকিয়ে আছে, সেইটে নতুন কিনতে গেলে এখানে লাইন দিতে হবে।
সেন্ট
পিটার্সে ঢুকে অনুভব করলাম আমার মানসিকতা পালটায় নি। আগের বারও সেন্ট পিটার্সে ঢুকে
মনে হয়েছিল, ব্যাটারা টাকা-পয়সা তছনছ করেছে। হাতে পয়সা থাকলে এবং কাজ না থাকলে আমি’ও
এই ভাবে ওড়াতাম।
শুধু
একটা ব্যাপার ছাড়া – পিয়েত্তা।
![]() |
জুম বার্স্ট |
কিন্তু
আসল হল মূর্তির ডিটেলিং। পেশীর প্রতিটি ভাঁজ, কাপড়ের প্রতিটি নকশা, যিশু ও মা
মেরির মুখের মূক ভাষা - কি বাস্তব, কি অনবদ্য। কোনো কন্ট্রোল-ডি নেই, আন-ডু করার
কোনো সুযোগ নেই। একটা ভুল হলেই সেটা চিরকালের মত পাথরের বুকে খোদাই হয়ে থেকে যাবে।
কিন্তু
ভুল হয় নি।
পিয়েত্তা
দেখতে হলে একটা বাইনোকুলার নিয়ে যাবেন, প্লিজ। আমার কাছে একটা ৭০-২০০ এল ক্যানন
লেন্স ছিল, তাই কোনোমতে গোললাইন সেভ করা গেছে।
পিয়েত্তা
কেন অত দূরে বুলেট-প্রুফ কাঁচে ঢাকা? এই জন্য।
৭) কোল্ড পিৎজা
যে কোন ভ্রমণকাহিনী খাওয়া দাওয়ার গপ্প ছাড়া শেষ হলে সেটা জাস্ট অসম্পূর্ণ। গতবার বিচ্ছিরি কান্ড করেছিলাম। রাহুল সাক্ষী। একটা পিৎজার
দোকানে ঢুকে দেখি রকমারী টপিং দেওয়া বাহারী সমস্ত পিৎজা। সাথে সাথে একটা পিকোলো
পিৎজা অর্ডার করে দিলুম। ওপরে ঘন চিজ, তার মাঝে ডুবে আছে কালো-সবুজ অলিভ, আর মাঝে
মাঝে উঁকি দিচ্ছে হাল্কা সেদ্ধ ও সামান্য ম্যারিনেটেড চিংড়ি। মোটামুটি তিন-চার
কামড়ে শেষ করে, দাম দিতে দিয়ে দেখি বয়স্ক ইতালিয়ান ভদ্রলোক হাঁ করে আমার দিকে হাত
বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর পাশে ওজন করার একটা যন্ত্র। পিস হিসেবে নয়, ওজন অনুযায়ী
দাম। আর ওজন!
তো
এবার যেটা টার্গেট ছিল কোল্ড পিৎজা। একটু ধন্দে ছিলাম। গরম-লোভনীয়-মুখে-মিলিয়ে-যাওয়া
পিৎজা যে একবার খেয়েছে, তার পক্ষে ঠান্ডা পিৎজা ব্যাপারটা চিন্তা করাও মুশকিল।
ভ্যাটিক্যান মিউজিয়ামের অন্দরের ক্যান্টিন যে আমায় এরকম চমকে দেবে তা কে জানতো।
লেটুস ও টুনার অকৃপণ টপিং এবং পিৎজা’র স্বাদ – দুই’ই চমৎকার।
উল্স |
৮) নো ফোতো
সিস্টিন
চ্যাপেল যে অবাক করে দেওয়া হাতের কাজ, সেটা সব্বাই জানে। কিন্তু ওই যে সবাই ঘাড় উঁচু
করে পূর্ণবয়স্ক মাইকেল অ্যাঞ্জেলো’র হাতের কাজ দেখছে, সেটা একটা ভালো ছবি হয়। মন
দিয়ে দেখার ভঙ্গীটাই।
কিন্তু
ছবি তোলা নিষেধ। কোথায় কি, ভেতরে ঢুকে দেখি – জনতা এন্তার ফ্ল্যাশ মেরে যাচ্ছে। অই
আধো-অন্ধকার নিঝুম চ্যাপেলে মাঝে মধ্যে তিব্র আলোর ঝলকানি। মনে হতে পারে দেখে এদের
দেশে নিয়ে এলে এরাও কি ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন না’ দেখলেই উত্তেজিত হয়ে পড়বে?
ভ্যাটিক্যানের
গার্ড’রা সমানে ‘নো ফোতো, নো ফোতো’ বলে চিল্লিয়ে যাচ্ছে।
আমি
কলকাতা থেকে এস এল আর ক্যামেরা’র রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে গেছি। এই নিদারুণ পরিশ্রমের
দরুন আমার পাপ নিশ্চই একটু হলেও কম হবে এই আশায় দিলাম রিমোটে চাপ।
তবে
স্ট্রিক্টলি নো ফ্ল্যাশ, পড়েছি তাতে ছবির ক্ষতি হয়, স্পেশালি ছবির রেস্টোরেশন
রিসেন্টলি করা হলে বেশী ক্ষতি হয়।
ছবি
উঠেছে, গার্ডের ধাতানি খেতে হয় নি। শুধু আমার পাশে বসা ধর্মপ্রাণা মহিলা, বেঞ্চে
শুয়ে থাকা ক্যামেরা’র অটোমেটিক শাটার পড়ার আওয়াজ শুনে বেজায় ভ্রু কুঁচকে, সেকেন্ড
কয়েক ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। খুব সম্ভত যীশুর অলীক কৃপা গোছের কিছু
ভাবছিলেন।
অথবা
টেররিস্ট।
৯) বোর্গসি
রোম-প্যারিস
এই সব ধাঁচের শহরে মিউজিয়াম-চার্চ-প্যালেস নিয়ে সামান্য সমস্যা আছে। একটু হেঁটেছেন
কি সামনে একটা মিউজিয়াম। এই ভাবে চলতে চলতে গোটা দশেক মিউজিয়াম দেখার পরে হয়তো
আপনি তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন তুলবেন করছেন, আর মনে মনে ভাবছেন দূদ্দুর প্ল্যানিং এর
কি দরকার? এই তো দিব্বি মেরে এনেচি।
তখন’ই
আপনি আবিষ্কার করবেন যে এই শহরে মোট দুশোর ওপরে মিউজিয়াম, প্যালেস। সরকারী হিসেবে।
এইবার ডি ডি বাংলার সেই অ্যাড’টা আপনার মনে ভাসবে – একজন মাঝবয়েসী লোকের পিছনে তার
দশ-বারোটা ছেলে-মেয়ে বাবা-বাবা বলে ছুটছে, ভদ্রলোকের হাতে কালো ছাতা। দৌড়োতে
দৌড়োতে ছাতা গেল ছিঁড়ে। ব্যাকগ্রাউন্ডে ভয়েস ওভার - 'বড়ো দেরী’তে ভাবতে বসেছেন ।
অথবা
ইস্কনের মন্দিরের কথা’ও মনে যেতে পারে। প্রতিটি বিল্ডিং এ ঢুকতে পয়সা নেয় কিনা। এখানে
কৃষ্ণ রাধাকে চোখ মেরেছিলেন, পয়সা দিন। এখানে প্রথম দোল খেলতে গিয়ে কৃষ্ণ আছাড়
খেয়েছিলেন, পয়সা দিন। এখানে কৃষ্ণ প্রথম হাফ প্যান্ট থেকে ফুল প্যান্ট পরেছিলেন,
পয়সা দিন। সেই রকম।
দশ-পনেরোটা
মোটামুটি ছবি আর খান কয়েক ভাঙ্গা জিনিসপত্র সাজিয়ে, আর্টের নামে এই মন্দার বাজারে
আট-দশ-বারো-চোদ্দো ইউরো যা পাওয়া যায় আর কি। ইন ফ্যাক্ট দেখে মনে হতেই পারে, এই
ছবিগুলো দেখার জন্য আমি যদি দশ ইউরো খরচা করতে পারি, তাহলে আর সারদা কি দোষ করল?
একমাত্র
ব্যতিক্রম বোর্গসি গ্যালারি।
একটি
প্রাইভেট গ্যালারি। বারো ইউরো দিয়ে না ঢুকে রোমা পাসের ফ্রি এন্টি দুটো’র একটা
এখানে খরচ করলে অনেক পড়তা পড়বে। বেসিক্যালি একটা দোতলা বাড়ি, এবং সাঙ্ঘাতিক কেতের
বাড়ি। যেমন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট না করে গেলে টিকিট পাওয়া মুশকিল, কারণ সিনেমা হলের মত
শোটাইম করা আছে। হাউস ফুল থুড়ি মিউজিয়াম ফুল হয়ে গেলেই পরের শো’র জন্য হাঁ করে বসে
থাকতে হবে। অবশ্য সেই সময়টুকু ভিলা বোর্গসি গার্ডেনে ঘুরে নেওয়াই যায়।
বোর্গসি
গ্যালারি একটা দোতলা বাড়ি। ঢুকে পড়লে শুধু একটা কথা মনে রাখতে হবে, হাতে দু’ঘন্টা
সময়। তার পরে হুইসল্ দিয়ে বার করে দেবে। সুতরাং হাঁ করে একটা পেন্টিং এর সামনে মিনিট
পাঁচেকের বেশী তাকিয়ে থাকলে আখেরে ক্ষতি আপনার।
ল্যুভ্
দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে, আপনি যদি বোর্গসি’তে ঢোকেন, তাহলে প্লিজ একগাদা এক্সপেক্টেশন
নিয়ে ধুকবেন না। ল্যুভ্ যদি কেভেন্টার্সের মিট প্ল্যাটার হয়, বোর্গসি তাহলে
সোদপুর হাইস্কুলের সামনের লটে মাছের চপ। দুটো আলাদা স্বাদ। একটার সাথে আরেকটার
কোনো তুলনা চলে না।
এবং
দুটোর কোনোটাই ছাড়া যায় না।
বোর্গসি'তে ঢুকবার সময় ক্যামেরা জমা রেখে ঢুকতে হয়, সুতরাং ...
বোর্গসি'তে ঢুকবার সময় ক্যামেরা জমা রেখে ঢুকতে হয়, সুতরাং ...
১০) ক্যুইজ টাইম বেবি
এইটা
কি? বলুন তো দেখি।
হিন্ট
একঃ এটা রোম শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে অনেক দূরে। প্রথাগত টুরিস্ট স্পট নয়। অধুনা
রোমান’রা জগিং করে।
হিন্ট
দুইঃ আপনার ক্লাস সেভেনের ইতিহাস বই’য়ে এটার ছবি ছিল। বেশ বড় করে, সাথে বর্ণনা’ও
ছিল।
![]() |
এটা কি সেটা আপনি বলবেন |
--
পুনশ্চঃ বুলেট ছাড়া কয়েকটি ছবি
পুনশ্চঃ বুলেট ছাড়া কয়েকটি ছবি
![]() |
ধূমপানরত সিজার |
![]() |
পিকচার পারফেক্ট |
![]() |
পঙ্গপালের মত পাখির ঝাঁক |
![]() |
টেলি-লেন্সের মাহাত্ম্য |
![]() |
প্যান্থিওন |
![]() |
রাস্তার আর্ট কলেজ |
![]() |
শিকারি যখন শিকার |
neror sonar kellar chhobi koi
ReplyDeletenei nei :P ebar ar somoy pai ni ..
Deletejampesh hoechhe re...tor pizzar galpota khasa..age to bolisni..
ReplyDelete:)
ReplyDeletelok ta puro veble geslo ..