অনিন্দ্য আর সুনন্দিতা আজকে একটু বেরিয়েছে। মাস ছয়েক
বিয়ে হয়েছে। সুনন্দিতার এক দূর সম্পর্কের মাসী অনিন্দ্যদের বাড়ির কাছেই থাকেন। দু’চাকায় মিনিট দশেক। অনেক দিন ধরেই যেতে বলছেন। বিয়ের
পরে সিরিয়াল নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে করতে অবশেষে মাসীর পালা এসেছে।
মাসীর এক পুত্র, পুত্রবধূ, পাঁচ বছরের নাতি। এ ছাড়া
আর বিশেষ কিছু অনিন্দ্য’র জানা নেই।
সুনন্দিতা অবশ্য মাসীকে ভালোই মনে করতে পারে, মাসতুতো দাদাকে আবছা। বৌদিকে সেই একবারই
বিয়ের সময় দেখা, সুতরাং কিছুই মনে নেই।
বাড়ি পৌঁছে জানা গেল নাতি আর তার মা নেই। বন্ধুর জন্মদিনে পাড়াতেই নেমন্তন্ন রক্ষা করতে গেছে। সে নাকি অধীর আগ্রহে অতিথিদের জন্য বসেছিল, তার মা’ই তাকে একরকম টানতে টানতে নিয়ে গেছেন। বিয়ের পরে বহু অচেনা বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে হয়েছে। এর চেয়েও ঢের অদ্ভুত কথা শুনেছে অনিন্দ্য। সে বিশেষ গা করল না।
একটি সদ্যবিবাহিত দম্পতির সাথে দেখা করতে একটি পাঁচ
বছরের ছেলের কোনো বিশ্বাসযোগ্য আগ্রহ থাকতে পারে না। তাই কি? অনিন্দ্য একবার ভেবে দেখল - একমাত্র গিফ্ট পাওয়ার আশা ছাড়া আর কিছু তো মাথায় আসছে না। আর বাচ্চাটার জন্যে হাতে করে কিছু আনাও হয় নি।
![]() |
http://tinyurl.com/mrw6e6t |
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই গাদা মিষ্টি ও নোনতা সহযোগে
প্লেট এসে পড়লো। অনিন্দ্য দক্ষ ভঙ্গীতে টপাটপ মুখে পুরতে শুরু করল। টপ ফর্মের
শেওয়াগের টেস্ট ইনিংস ওপেন করার মত, বিপক্ষ বুঝে ওঠার আগেই সাবড়ে দাও। বিয়ের পরে প্রথম প্রথম একটু অসুবিধে হত। প্লেটে খাবার
দাবার রয়ে যেত। একগাদা বাউন্সার। ফলতঃ প্রচুর ডট বল। ইদানীং এ ধরণের নেমন্তন্নে যাওয়ার আগে অনিন্দ্য বাড়িতে পনেরোটা
ডন মেরে যায়। আর কোনো অসুবিধে হয় না। ইন ফ্যাক্ট, সময় সময় সুনন্দিতার প্লেট থেকেও
নির্দ্বিধায় দুএকটা সাবড়ে দেয়।
তবে আজকে চ্যালেঞ্জ কম। এলাকার বিশেষ পরিচিত
মিষ্টির দোকান থেকে সাপ্লাই এসেছে। অনেকটা কমন পড়া ইতিহাসের কোশ্চেনের মত। অনিন্দ্য টুকটুক করে প্রশ্নপত্র দেখে পরীক্ষা শুরু করে দিল।
ইতিমধ্যে নাতি মা’সহ বাড়ি ফিরে এসেছে, সাথে জন্মদিনে উপহার পাওয়া পাইকারী কফি
কাপ। কফিকাপের সাইজ দেখে অনিন্দ্য যারপরনাই বিস্মিত। সে দেশ-বিদেশ চড়ে বেড়ায়, এরকম
ফুলদানীর মত সাইজের কফিকাপ, সেটাও আবার পাঁচ বছরের একটি খুদে মানুষের জন্য। জাস্ট
ভাবা যায় না। ভারতবর্ষের GDP আসলে হুড় হুড়
করে বাড়ছে।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে নাতি একদম কথা বলে না।
তিন-চারবার জিজ্ঞেস করার পরে নাম জানা গেল, সুবিনয়।
পাঁচ বছর বয়েস। টু আর্লি টু কমেন্ট। কিন্তু অনিন্দ্য বলতে বাধ্য হচ্ছে সার্থকনামা
ছেলে। যিনিই নাম রেখে থাকুন, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ।
সুবিনয় প্রথমেই উঁকিঝুঁকি মেরে কি’সব খুঁজল। মুখে একরাশ আশা নিয়ে অনিন্দ্য আর সুনন্দিতার দিকে বারকয়েক তাকাল। তারপরে শূন্য চোখে থম মেরে বসে রইল, মুখে একটু আশাভঙ্গের বিষাদ। খানিক পরে আবার কিসব খুঁজল, অনিন্দ্যর চেয়ারের আশেপাশে, পিছনে। অনিন্দ্য’র মুখের দিকে বার কয়েক তাকালো। কি জানি মুখে কিছু লেগে আছে হয়তো। অনিন্দ্য প্লেট শেষ করে বাথরুমে গিয়ে হাত ধোওয়ার সময় মুখটা বেশ করে কচলে কচলে ধুয়ে নিল।
সুবিনয় প্রথমেই উঁকিঝুঁকি মেরে কি’সব খুঁজল। মুখে একরাশ আশা নিয়ে অনিন্দ্য আর সুনন্দিতার দিকে বারকয়েক তাকাল। তারপরে শূন্য চোখে থম মেরে বসে রইল, মুখে একটু আশাভঙ্গের বিষাদ। খানিক পরে আবার কিসব খুঁজল, অনিন্দ্যর চেয়ারের আশেপাশে, পিছনে। অনিন্দ্য’র মুখের দিকে বার কয়েক তাকালো। কি জানি মুখে কিছু লেগে আছে হয়তো। অনিন্দ্য প্লেট শেষ করে বাথরুমে গিয়ে হাত ধোওয়ার সময় মুখটা বেশ করে কচলে কচলে ধুয়ে নিল।
এরপর শুরু হল আসল আলোচনা। সেই বিখ্যাত চর্বিতচর্বণ।
বিয়েতে কতগুলো শাড়ি পাওয়া গেছে, কে কে আসবে বলে আসে নি। চিংড়িটা কত ভালো ছিল, এবং
মটনটা কত সুসিদ্ধ। বিয়ের পরে বেড়াতে কোথায় গেছিলে? সেখানে ওয়েদার কেমন ছিল? ফেরার
সময় ট্রেনে ভালো ঘুম হয়েছিল তো? এই সময়টা খুব টাফ পিরিয়ড। একটিও হাই না তুলে,
জিজ্ঞাসু মুখ করে, চোখ টান টান করে প্রশ্নকর্তার মুখের দিকে অবিরাম হুঁ হুঁ করে
যেতে হবে। কোনো মতেই যেন পেটভরা ঘুমের আবেশ চোখে প্রকাশ না পায়। দুর্বিষহ ঘটনা।
একবার ঘটলে সেই খবর দাবানলের গতিতে আত্মীয় মহলে এস-এম-এস, ফোন-কল এবং ইদানীং
ই-মেলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে। পল্লবিত হবে।
অন্তিম ভার্শনটায় দাঁড়াবে জামাই খুব সম্ভবতঃ বিকেলের
দিকে কিঞ্চিৎ টেনে এসেছিল, নইলে ভর সন্ধ্যেবেলায় কেউ ভদ্রবাড়িতে সোফা থেকে চোখ
বন্ধ করে গড়িয়ে পড়ে যায়?
অনিন্দ্য অনেকবার ভেবেছে একটা FAQ তৈরী করে তার প্রিন্ট আউট নিয়ে দিয়ে দিলে ব্যাপারটা
সুবিধের হয়। ফার্স্ট, দু’পক্ষের সময়
বাঁচবে। আর সেকেন্ড, একটা রেকর্ড থাকবে। মানে, সে কিরে ...... তোদেরকে দশ ভরি
বলেছে, আমায় তো পনেরো ভরি বলেছিল। ওরা না একটু বাড়িয়ে বলে। বুঝছিসই তো বেসিকেলি
উদ্বাস্তু। দেখিস নি আমাদের বাড়িতে এসে কিরকম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খাটের ডিজাইন দেখছিল।
FAQ থাকলে এই ধরনের ক্ষতিকর সিন্ক্রোনাইজেশন-সংক্রান্ত ত্রুটির
হাত থেকে বাঁচা যায়। পরিষ্কার ভাবে FAQ তে সব লেখা থাকবে। কনফিউশনের কোনো জায়গাই নেই।
অনিন্দ্য জেগে থাকার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় সুবিনয়ের
মুখের দিকে তাকালো। এই শিশুটিই আজ তাকে বাঁচাতে পারে। লোভে পড়ে চারটে পেল্লাই
সাইজের সিঙ্গাড়া, আর তারপরে সেগুলোকে কম্পেন্সেট করার জন্য ডজন’খানেক রসের মিষ্টি। ক্লোজ-ইন ফিল্ডাররা দ্রুত ঘিরে
ধরছে। উইকেট পড়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। যদি সুবিনয় একটু কথা বলে তাহলে টেস্ট ম্যাচটা বাঁচলেও বাঁচতে পারে।
অনিন্দ্য দুএকটা মামুলী প্রশ্ন দিয়ে শুরু করল। স্টপ-গ্যাপ বোলার স্টাইল। কোন ক্লাস, মা
বেশী বকে না বাবা বেশী বকে। কিন্তু ছেলে'তো কিছুই বলে না। মুখ ভেটকে বসে আছে, আর
এদিক ওদিক দেখছে।
ইতিমধ্যে বিয়ের বেনারসী কোন দোকান থেকে কেনা সেই আলোচনা শুরু হয়েছে। অনিন্দ্য একবার ভাবল, সুবিনয়ের কি সত্যিই কিছু এক্সপেক্টেশন ছিল? ইস্, মিষ্টির সাথে একটা ক্যাডবেরি নিয়ে আসলেই হত। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিশ্চয়ই গিফ্ট খুঁজছে।
ইতিমধ্যে বিয়ের বেনারসী কোন দোকান থেকে কেনা সেই আলোচনা শুরু হয়েছে। অনিন্দ্য একবার ভাবল, সুবিনয়ের কি সত্যিই কিছু এক্সপেক্টেশন ছিল? ইস্, মিষ্টির সাথে একটা ক্যাডবেরি নিয়ে আসলেই হত। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিশ্চয়ই গিফ্ট খুঁজছে।
বেনারসীর দাম শুনে মাসী জানিয়েছেন, এ তো কিছুই নয়।
দামী বেনারসী কেনা হয়েছিল বটে তার ছোটো ননদের বিয়েতে। অনিন্দ্য ঘুমের আবেশে মাথা নিচু করে
ফেলেছে। ফলো-অন অলরেডি হয়ে গেছে, পরাজয় সুনিশ্চিত। ইনিংস ডিফিট বাঁচানো যায় কিনা এখন সেইটেই শুধু দেখার।
সুবিনয় আর-এক বার হতাশ মুখে অনিন্দ্য’র চেয়ারের পেছন’টা দেখল। তারপর ছোটো ছোটো পায়ে এগিয়ে এসে অনিন্দ্যর কানের কাছে মুখ নামিয়ে নিয়ে বলল,
সুবিনয় আর-এক বার হতাশ মুখে অনিন্দ্য’র চেয়ারের পেছন’টা দেখল। তারপর ছোটো ছোটো পায়ে এগিয়ে এসে অনিন্দ্যর কানের কাছে মুখ নামিয়ে নিয়ে বলল,
“তোমাদের সাথে কোনো বাচ্চা নেই? বলো না? ... সত্যি নেই? ...... খেলতাম আর গল্প
করতাম।”
khub sundor
ReplyDeleteভালো :)
ReplyDeletedaarun
ReplyDeletedaarun to :)
ReplyDeletethenku :)
DeleteBhalo laglo pore khub.
ReplyDelete:)
Deleteডাকনামটা পাল্টে ফেলুন মশাই, একটু পজিটিভ কিছু হোক।
Dil to bachha hai ji...:)
ReplyDeleteএকদম ম্যাডাম ।।
Deletesotyi golpo?
ReplyDeleteকিছুটা রোশনি।
Deleteবাকিটা কল্পনাশক্তি।