আচ্ছা যন্ত্রণা, বিয়ে ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম প্রায়। এমনিতে সবই ঠিকঠাক। সৌম্যজিত আর সৌমিলী, দুই সৌ-তে প্রেম পর্ব সেরে গুটি গুটি সংসারের সৌরজগতে ঢুকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আঠাশ আর চব্বিশ। মাহেন্দ্রক্ষণ। দু বাড়ি থেকেই বিয়ের দিন দেখা শুরু হয়েছে।
কিন্তু ওই যে। যন্ত্রণা।
পরিবারের সব্বাই শুরু করেছে। প্রথমে আত্মীয় মহল, তারপর বাবা-মা। হাল্কা হাসিঠাট্টা আর ফিসফাস দিয়ে শুরু। বর্তমানে কিঞ্চিৎ গুঞ্জনে পরিণত হয়েছে।
ছেলে মেয়ে এখনও নিজেদের মধ্যে তুই তোকারি করে।
সেদিন পাশের বাড়ির দিদু বললেন, "প্রেম করেছিস, বেশ করেছিস। আজকালকার নিয়মই তাই। সে তো তোর বাবা মাও করেছে। কিন্তু তাই বলে স্বামী স্ত্রী নিজেদের মধ্যে তুই তুই করে কথা বলবে? বাপমাকে কোনোদিন তুই তোকারি করতে শুনেছিস? কিরে ইন্দ্র তোরা কিছু বলিস না কেন? বাপের জন্মে শুনি নি বাপু এরকম কথা।" ইন্দ্রজিত ছেলেকে কোনোদিনই কিছু করতে বাধ্য করেন নি। সেদিনও বলতে পারলেন না। ঘাড় নেড়ে হেঁ হেঁ করে গেলেন।
কবিতা অবশ্য সামান্য গজ্গজ্ করছিলেন। সমাজ সংস্কার বলে একটা ব্যাপার আছে তো, নাকি? ইন্দ্রজিত মেনে নিলে চলবেই বা কেন?
![]() |
http://tinyurl.com/qaonoo5 |
সেদিন এক সেট দাদা বৌদি এসেছিলেন। দাদা বরাবরই বেশ আধুনিকমনস্ক, অধুনা এন আর আই। সব শুনে টুনে শার্প তীর ছাড়লেন, "বাঙ্গালীদের মধ্যে এরকম শুনিনি। সাঁওতালদের মধ্যে অবশ্য এরকম প্রথা আছে বলে শোনা যায়। ওরা নিজেদের বাবামাকেও তুই তোকারি করে। বাঙ্গালী জেন Y এখন সেদিকেই এগোচ্ছে।" কেপ্রি পরিহিত বৌদি আর গোঁফের আড়ালে মুচকি হাস্যরত দাদাকে মনে মনে বাছা বাছা গুটিকয়েক ডাকনাম দিয়েছিল সৌম্য।
ইনফ্যাক্ট, তারপর থেকেই কবিতা একটু বেশী মাত্রায় উত্তেজিত। ইন্দ্রজিত না চাইলেও কিছু করার নেই। তাঁকেই লাগাম ধরতে হবে।
কবিতা আজকে ডিনার সার্ভ করার সময় সৌম্যকে একটু কড়া সুরে বলে দিয়েছেন, "এখন যা করছো করো, বিয়ের পরে কিন্তু এসব চলবে না। তোমাদের এই ছ্যাবলামির জন্য আর সবার কাছে মান সম্মান খোয়াতে পারবো না বাপু।"
কবিতা আজকে ডিনার সার্ভ করার সময় সৌম্যকে একটু কড়া সুরে বলে দিয়েছেন, "এখন যা করছো করো, বিয়ের পরে কিন্তু এসব চলবে না। তোমাদের এই ছ্যাবলামির জন্য আর সবার কাছে মান সম্মান খোয়াতে পারবো না বাপু।"
হাঁড়িমুখ সৌম্য জলদি খাওয়া দাওয়া শেষ করে পাশের ঘরে চলে গেল। ইন্দ্রজিত দেখলেন। আবারও কিছুই বলতে পারলেন না।
কবিতা গম্ভীর মুখে ডাইনিং টেবিলে থালা বাসন গুছোতে শুরু করলেন।
সৌম্য শোবার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ইন্দ্রজিত পাশের বেডরুমে ঢুকে মশারি তুলে রবিবাসরীয় পড়তে শুরু করলেন।
কবিতা কিছুক্ষণ পরে ঘরে ঢুকলেন। শুতে আসবার আগে রোজকার অভ্যেসমত মুখ ধুয়ে এসেছেন। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়ালেন।
স্বামী স্ত্রী এখনও কোনো কথা বলেন নি।
কবিতা মশারী সরিয়ে উঠে এলেন, "এই সরে শোও তো।"
ইন্দ্রজিত উল্টে কবিতার দিকে সরে এলেন, "আচ্ছা ... সৌম্যদের ওদের মত ..."
কবিতা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, "তুমি একদম মাথা গলাবে না।"
"আচ্ছা। তাই সই।"
"হ্যাঁ, একদমই তাই। ছি ছি কি লজ্জা, কি লজ্জা।"
ইন্দ্রজিত কি ভেবে রবিবাসরীয় নামিয়ে রাখলেন।
একটু ইতস্তত করে বললেন, "তোকে কলেজে পড়তে শক্তির কবিতার বই পড়তে দিয়েছিলাম। মনে আছে? যেদিন প্রোপোজ করেছিলাম, সেদিন। সেটা কোথায় রয়েছে রে? বুক র্যাকে খুঁজে পেলাম না।"
কবিতা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, "তুমি একদম মাথা গলাবে না।"
"আচ্ছা। তাই সই।"
"হ্যাঁ, একদমই তাই। ছি ছি কি লজ্জা, কি লজ্জা।"
ইন্দ্রজিত কি ভেবে রবিবাসরীয় নামিয়ে রাখলেন।
একটু ইতস্তত করে বললেন, "তোকে কলেজে পড়তে শক্তির কবিতার বই পড়তে দিয়েছিলাম। মনে আছে? যেদিন প্রোপোজ করেছিলাম, সেদিন। সেটা কোথায় রয়েছে রে? বুক র্যাকে খুঁজে পেলাম না।"
কবিতা ইন্সট্যান্ট হাঁ। ইন্দ্রজিতের সাহসের প্রশংসা করতে হয়। কবিতের মুখের পেশীতে রামধনু খেলে গেল - প্রথমে গরগরে রাগ, অতঃপর অকপট বিস্ময় এবং শেষমেশ নববধূর লজ্জা। মনে পড়েছে তো। ১৯৭৬ এর বৃষ্টির দুপুর। বি. এ. ফার্স্ট ইয়ার। প্রেসিডেন্সীর লাইব্রেরীতে শক্তি চাটুজ্জের কবিতার বই। দুরু দুরু হাতে যুবক ইন্দ্রজিত তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন বটে। ইন্দ্রজিত নিজে তখন বি. এস. সি. থার্ড ইয়ার। প্রথম পাতায় লেখা ছিল, "কবিতা ভালো থাকিস।" ব্যস, আর কিচ্ছু না।
আলমারীর গোপন তাকে, গয়নার বাক্সের পেছনে, তিন দশক ধরে সযত্নে রাখা আছে সেই বই।
অতি-যত্নের ফল। কবিতা কবেই ভুলে গেছেন।
বিয়ের আগে লজ্জায় কাউকে ও বই দেখাতে পারেন নি। বিয়ের পরে তো প্রশ্নই ওঠে না। প্রেম পর্ব শুরু হতেই মাস দু'য়েকের মধ্যে 'তুই' নিজে থেকেই 'তুমি' হয়ে গেছিল। উনআশিতে বিয়ে। ধীরে ধীরে স্মৃতিতে ধুলো জমেছে, একদম হারিয়ে যায় নি।
ইন্দ্রজিত আজ এক ধাক্কায় সব ধুলো সরিয়ে দিয়েছেন।
আলমারীর গোপন তাকে, গয়নার বাক্সের পেছনে, তিন দশক ধরে সযত্নে রাখা আছে সেই বই।
অতি-যত্নের ফল। কবিতা কবেই ভুলে গেছেন।
বিয়ের আগে লজ্জায় কাউকে ও বই দেখাতে পারেন নি। বিয়ের পরে তো প্রশ্নই ওঠে না। প্রেম পর্ব শুরু হতেই মাস দু'য়েকের মধ্যে 'তুই' নিজে থেকেই 'তুমি' হয়ে গেছিল। উনআশিতে বিয়ে। ধীরে ধীরে স্মৃতিতে ধুলো জমেছে, একদম হারিয়ে যায় নি।
ইন্দ্রজিত আজ এক ধাক্কায় সব ধুলো সরিয়ে দিয়েছেন।
সেই ছিয়াত্তরের পরে এই দুহাজার তেরো। কদ্দিন বাদে ইন্দ্রজিত তাঁকে তুই বলে সম্বোধন করলেন।
কই, একটুও খারাপ লাগছে না তো!
Besh likhechhis! Likhte thak!
ReplyDeleteউফফ্, কত কষ্ট করে, ফেবুতে শলা-পরামর্শ করে এই কমেন্ট পাওয়া :)
Deleteছিমছাম ....ঝকঝকে ....আমি এবার থেকে তোমার ব্লগ নিয়মিত অনুসরণ করছি
ReplyDeletebesh besh.... bhalo hoise..
ReplyDelete:)
Deletebhalo hoyeche joyda... :)
ReplyDelete:)
Deletekhub cute hoyechhey re golpota :)
ReplyDeleteআরে, নেমসেক তো :)
Deletebhalo bhalo... :)- Arunava (mota)
ReplyDeleteKhak
Deletekhub valo legechhe...vishan chena chena gandho galper madhye..:)
ReplyDeletePradip er vashay 'ghar ghar ki gop' :P
DeleteAmi jalikhbo bhabchhilam seta tor didi i likhe dilo....seshta bere laglo.....
ReplyDeleteSesh ei to moja :)
Deletekhub valo :)
ReplyDeletedarun
ReplyDeleteস্বাগতম!
DeleteDarun darun...
ReplyDeleteMinakshi Basu Roy
নিজের জীবনেও এই এক dilemma, তাই বোধয় একটু বেশিই এনজয় করলুম :)
ReplyDeleteহ্যাঁ, আমাদের জেনারেশনের অনেকেই ভুক্তভুগী।
Delete